ভারতের রেল ইঞ্জিন নির্মাণ শিল্প
রেল ইঞ্জিন নির্মাণ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। চিত্তরঞ্জন , বারাণসী , জামশেদপুর প্রভৃতি স্থানে বড়ো বড়ো রেলইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা আছে। রেলইঞ্জিন নির্মাণ শিল্পে কাঁচামাল হিসাবে সাধারণত লোহা ও ইস্পাত বেশি ব্যবহার করা হয়।
এজন্য (১) লোহা ও ইস্পাত কারখানার কাছাকাছি স্থানে এই শিল্পের বিকাশ ঘটে। অবশ্য রেল ইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা স্থাপন করার আগে সম্ভাবনাময় স্থানে (২) উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা , (৩) প্রচুর মূলধন এবং (৪) পর্যাপ্ত সংখ্যায় দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা , (৫) বিদ্যুৎশক্তির সহজলভ্যতা , (৬) উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার প্রাপ্তিযোগ্যতা , (৭) উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করার সুযোগ সুবিধা প্রভৃতি বিষয়ও বিবেচনা করা হয়।
ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে রাজস্থানের আজমীর এবং পশ্চিমবঙ্গের কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপে বাষ্পীয় রেলইঞ্জিনের আংশিক উৎপাদন হত। তখন প্রধানত বিদেশি যন্ত্রাংশ আমদানি করে এই দুই ওয়ার্কশপে সেগুলি জোড়া ( assemble ) লাগিয়ে বাষ্পীয় রেলইঞ্জিন তৈরি করা হত। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের তিনটি স্থানে , যথাক্রমে— (১) পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন , (২) উত্তরপ্রদেশের বারাণসী এবং (৩) ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে তিনটি বৃহদায়তন রেল ইঞ্জিন কারখানা গড়ে ওঠে।
চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনে রেল ইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা স্থাপিত হয় । এর নাম চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (The Chittaranjan Locomotive Works , সংক্ষেপে CLW) । এখানে রেলইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলার প্রধান দুটি সুবিধা ছিল – (i) নিকটবর্তী কুলটি-বার্নপুর ও দুর্গাপুর লোহা ইস্পাত কারখানা থেকে লোহা ও ইস্পাত এবং (ii) রানিগঞ্জ থেকে কয়লা সহজেই পাওয়া যায়।
এছাড়া (iii) দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ , (iv) এখানকার সমতল ক্ষেত্র , (v) সংলগ্ন বিহার , ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের ঘন জনবসতি , ফলে সুলভ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা , (vi) গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড এবং পূর্ব রেলপথের মাধ্যমে সৃষ্ট এই অঞ্চলের উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা , (vii) ভারত সরকারের মূলধন বিনিয়োগ প্রভৃতি সুযোগসুবিধা চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা স্থাপনে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। প্রথম দিকে এখানে কেবলমাত্র বাষ্পীয় রেল ইঞ্জিন তৈরি হত। তবে ১৯৭২ সালের পর থেকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের পরিবর্তে শুধু ডিজেল ও বৈদ্যুতিক রেলইঞ্জিন তৈরি হয়।
বারাণসীর রেল ইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা
উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে ডিজেল রেল ইঞ্চিন নির্মাণের একটি কারখানা আছে। এর নাম ‘ ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস ‘। এখানে আমদানি করা যন্ত্রাংশ জোড়া লাগিয়ে ১৯৬৪ সালে প্রথম রেল ইঞ্জিন উৎপাদিত হয় । অবশ্য বর্তমানে এখানে ডিজেল রেল ইঞ্জিন নির্মিত হয়।
জামশেদপুরের রেল ইঞ্জিন কারখানা
পূর্বতন বিহার এবং বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্তর্গত জামশেদপুরে একটি রেল ইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা আছে । এর নাম ‘ টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ কোম্পানি লিঃ ‘ (Tata Engineering and Locomotive Company Ltd. , সংক্ষেপে TELCO)। এটি সম্পূর্ণ বেসরকারি মালিকানায় স্থাপিত হয় এবং ১৯৫২ সালে এখানে বাষ্পীয় রেলইঞ্জিন নির্মিত হয়। অবশ্য ১৯৭০ সালের পর থেকে এখানে বাষ্পীয় রেলইঞ্জিনের পরিবর্তে ইঞ্জিনের নানা যন্ত্রাংশ তৈরি হয়।
অন্যান্য রেলইঞ্জিন কারখানা
বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভূপালে ‘ ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড ’ (Bharat Heavy Electricals Ltd , সংক্ষেপে BHEL) এর ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ কারখানায় বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন তৈরি করা যায়। এছাড়া পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় ডিজেল রেল ইঞ্জিন মেরামত ও এর যন্ত্রাংশ উৎপাদনের কারখানা এবং কর্ণাটকের বাঙ্গালোরে রেল ইঞ্জিনের চাকা ও এক্সেল তৈরির কারখানা আছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .