ভারতের সংবিধানে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের স্বাধীনতা ও সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভারতে বেশীরভাগ নারী সমান অধিকার তো দূরের কথা, তারা নানাভাবে হিংসায় অত্যাচারিত হচ্ছে। সুতরাং শুধু সংবিধান ও আইন থাকলেই হবে না, এর জন্য সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ থাকতে হবে। সর্বোপরি জনসাধারণের মধ্যে আত্মসচেতনতাবোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাই ভারতে নারীদের
বিরুদ্ধে হিংস্রতা রোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন
(১) শিক্ষার ব্যবস্থা
ভারতের নারীজাতিকে তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তাই এর জন্য চাই আত্মবিশ্বাস ও তার জন্য শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। সারা ভারতে নারীজাতির জন্য প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে, যাতে সর্বস্তরে সব নারী শিক্ষার সুযোগ পেতে পারে।
(২) উপার্জনক্ষম হয়ে ওঠা
বিভিন্ন রকম কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত ভারতীয় নারীদের কাজের সুযোগ ও রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন। অর্থনীতির দিক থেকে উপার্জনক্ষম হয়ে উঠলে নারীদের বিরুদ্ধে হিংস্রতার মাত্রা কমবে।
(৩) আইনের কঠোরতা
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের আইন আছে, আবার আইনভঙ্গ করলে জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু আইনের অনেক ফাঁকফোকর থাকায় প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি হচ্ছে না। তাই নারী নির্যাতন বিষয়ক আইন প্রয়োগের ব্যাপারে কোনো ধরনের শিথিলতা বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিলে হবে না। আইনকে কঠোর করে নারী নির্যাতন বিষয়ের বিচারকে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা
ভারতের মধ্যে যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে তাদেরকে এর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভারতের নারীদের শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে।
(৫) গণমাধ্যমের ভূমিকা
ভারতের নারীদের হিংস্রতা রোধের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম- গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। নারী হিংস্রতার ঘটনাগুলিকে যথাযথ ভাবে প্রচার করে নিগ্রহকারীদের জনসমক্ষে তুলে ধরে।
(৬) বিনাব্যয়ে আইনের ব্যবস্থা
ভারতে নিগৃহীত নারীরা যাতে সহজে বা বিনা ব্যয়ে আইনের সাহায্য নিতে পারে, তার ব্যবস্থা করা দরকার। এই উদ্দেশ্যে ভারতে কোনো কোনো রাজ্যে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছে, যেখানে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, দাম্পত্য কলহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনার মীমাংসা করা হয়।
মন্তব্য
পরিশেষে বলা যায় যে, নারীদের প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধের কোনো সহজ পথ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। যুগ যুগ ধরে পুরুষজাতি নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসাবে ব্যবহার করে তাদের বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করে এসেছে। একমাত্র শিক্ষা ও সমাজচেতনা ভারতীয় নারীজাতিকে এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এবিষয়ে নারীদের এগিয়ে এসে মুখ্যভূমিকা নিতে হবে। তবেই সমাজ সত্যিকারের সভ্য সমাজে পরিণত হবে এবং মহিলারাও মানুষ হিসাবে যোগ্য মর্যাদার অধিকারী হতে পারবেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .