পৃথিবীর প্রধান বায়ুচাপ বলয়
পৃথিবীতে মোট 7টি উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলয় আছে। যেমন—
- নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
- উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় বা কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়
- দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় বা মকরীয় উচ্চচাপ বলয়
- সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
- কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
- সুমেরু উচ্চচাপ বলয়
- কুমেরু উচ্চচাপ বলয়
নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
নিরক্ষরেখার দুদিকে 10° অক্ষরেখার মধ্যে সারা বছর ধরে বায়ুর নিম্নচাপ দেখা যায়। প্রধানত তিনটি কারণে এই নিম্নচাপ বলয়টি সৃষ্টি হয়েছে—
(a) এই অঞ্চলে সারাবছর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে বায়ু সারাবছরই উয় ও হালকা,
(b) এখানে জলভাগ বেশি বলে বায়ুতে জলীয়বাষ্পকণার হারও বেশি এবং
(c) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য নিরক্ষীয় অঞ্চলের ওপরের বায়ু উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছিটকে যায় অর্থাৎ বায়ুর ঘনত্ব কমে যায়। নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের আর এক নাম নিরক্ষীয় শান্তবলয়।
উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় বা কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় বা মকরীয় উচ্চচাপ বলয়
নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দু দিকে প্রায় 25° থেকে 35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে বায়ুমণ্ডলে দুটি উচ্চচাপ বলয় আছে। এই দুটি উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টি হওয়ার কারণ—
(a) নিরক্ষীয় অঞ্চলের যে উম্ন ও আর্দ্র বায়ু ক্রমশ ওপরে ওঠার পর ঠান্ডা ও ভারি হয় এবং পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছিটকে যায়, সেই বায়ু ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে 25° থেকে 35° অক্ষরেখা বরাবর নীচের দিকে নেমে আসে। এছাড়া
(b) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য দুই মেরু অঞ্চল থেকে যে ঠান্ডা ও ভারি বাতাস নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, তারও কিছু অংশ এখানে চলে আসে। এই দুটি কারণে উভয় গোলার্ধে 25° থেকে 35° অক্ষরেখার মধ্যে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায় ফলে সৃষ্টি হয় উচ্চচাপ। উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়কে উপক্রান্তীয় শান্তবলয় বা অশ্ব-অক্ষাংশ বলা হয়।
সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় এবং কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
পৃথিবীর আবর্তনের বেগ মেরুদ্বয়ের তুলনায় দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে (60°–65° অক্ষাংশে) অনেক বেশি হওয়ায় এই দুই অঞ্চলের বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার ফলে মেরুবৃত্ত প্রদেশে বায়ুর ঘাটতি পড়ে এবং বায়ুতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ ও মেরু বায়ুপ্রবাহ যেখানে মিলিত হয়েছে সেই অঞ্চল বায়ু প্রভাবহীন হওয়ায় সেখানে এক শান্তভাব বিরাজ করে, একে তাই মেরুদেশীয় বা শান্তৰ্লয় বলে।
সুমেরু উচ্চচাপ বলয় এবং কুমেরু উচ্চচাপ বলয়
উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুর চাপ বেশি। এর কারণ—
(a) ওই অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডার জন্য বায়ু সব সময় ঠান্ডা সুতরাং ভারি।
(b) বাষ্পীভবন খুব কম বলে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণও কম থাকে এবং
(c) পার্শ্ববর্তী মেরুবৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় থেকে যে বায়ু ওপরের দিকে ওঠে তার কিছু অংশ মেরু অঞ্চলে নেমে আসে। এই তিনটি কারণে দুই মেরু সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুর ঘনত্ব বেশি সুতরাং চাপও বেশি হয়।
Read More
- পশ্চিমবঙ্গের কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
- পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।
- বায়ুর উষ্ণতা ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
- বায়ুর চাপের তারতম্যের কারণগুলি উল্লেখ করো।
- বায়ুমণ্ডলের উপাদান হিসেবে ধূলিকণা ও জলীয়বাষ্পের গুরুত্ব আলোচনা করো।
- পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব লেখো।
- পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী দেশ ও রাজ্য সমূহের বিবরণ দাও।
- অঙ্গরাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব আলোচনা করো।
- পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদ এর পরিচয় দাও।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .