দেশের আর্থিক জোগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলাে ব্যাঙ্ক ঋণ। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যাঙ্ক ঋণের নিয়ন্ত্রণ প্রয়ােজন হয়। দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার অভিভাবক হিসাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য ঋণের জোগান নিয়ন্ত্রণের গুরুদায়িত্বটি পালন করে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যাতে প্রয়ােজনে বেশি করে বা কম করে ঋণ দেয় সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হাতে কতগুলি অস্ত্র আছে। এইগুলিকেই আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (Methods of credit control) বলে থাকি।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মূল হাতিয়ার হলাে দু’টি— পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (Quantitative credit control methods) এবং গু গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (Qualitative credit control methods)। এই দু’টির আবার কয়েকটি করে ভাগ আছে যার সাহায্যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সহজেই ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রশ্ন অনুযায়ী এখানে আমরা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিই আলােচনা করবাে।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ব্যাঙ্ক রেট বা ব্যাঙ্ক হার (Bank Rate)
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ন্যূনতম যে বাট্টার হারে হুন্ডি বা বিল ভাঙিয়ে অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা দেয় সেই বাট্টার হারকে ব্যাঙ্ক রেট বলে। অর্থাৎ ব্যাঙ্ক রেট হলাে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সুদের হার। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ইচ্ছা করলে এই ব্যাঙ্ক রেট বাড়াতে বা কমাতে পারে। এই ব্যাঙ্ক রেট কমানাে বা বাড়ানাের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে।
খােলাবাজারি কারাবার (Open_Market Operation)
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কর্তৃক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরকারি ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় করাকে বলে খােলাবাজারি কারবার। মুদ্রাস্ফীতির সময় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জনসাধারণের কাছে ঋণপত্র, বন্ড সরাসরি বিক্রি করলে উচ্চ সুদের হারে আকৃষ্ট হয়ে জনসাধারণ তাদের ব্যাঙ্ক আমানত থেকে টাকা তুলে এই সব ক্রয় করে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির নগদ অর্থের রিজার্ভ কমে ঋণদানের ক্ষমতা কমে যায়। এভাবে মুদ্রাস্ফীতি দমন করা হয়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণপত্র বা বন্ড ক্রয় করলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির অর্থের পরিমাণ বাড়ে। ফলে তাদের ঋণদানের ক্ষমতা বাড়ে।
পরিবর্তনশীল জমার অনুপাত (Variable Reserve Ratio)
ব্যাঙ্কিং আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে তাদের মােট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ জমা রাখতে হয়। এই নির্দিষ্ট অংশ বা অনুপাতকে নগদ জমার অনুপাত (Cash Reserve Ratio বা CRR) বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ইচ্ছা করলে এই অনুপাত বাড়াতে বা কমাতে পারে। এই নগদ জমার অনুপাতকে বাড়ানাে বা কমানাের ক্ষমতাকে পরিবর্তনীয় জমার অনুপাত পদ্ধতি বলে। মুদ্রাস্ফীতি দমনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই জমার অনুপাত বাড়িয়ে দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির ঋণপ্রদানের ক্ষমতাকে কেড়ে নেয়। অন্যদিকে, মুদ্রা সংকোচনকালে বা মন্দার সময়ে এই রিজার্ভের অনুপাত কমিয়ে ব্যাঙ্কগুলির ঋণ সৃষ্টির ক্ষমতা বাড়ানাে হয়।
বিধিবদ্ধ নগদ অনুপাত (Statutory Liquidity Ratio বা SLR)
নগদ জমার অনুপাতের পাশাপাশি ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বিধিবদ্ধ নগদ অনুপাত নীতি প্রবর্তন করে। এই নিয়ম অনুসারে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে প্রতিদিনের মােট আমানতের একটি অংশ নগদ – টাকা, সােনা এবং অনুমােদিত ঋণপত্র জমা রাখতে হয়।
এছাড়াও নগদ জমা অনুপাত, রিপাে রেট এবং জমা রিপাে রেটের মাধ্যমেও পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
Read More
- ঘাটতি বাজেট কাকে বলে?
- ঘাটতি ব্যয়ের অসুবিধা লেখাে।
- সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি কাকে বলে?
- বাণিজ্যচক্র কাকে বলে?
- ভারসাম্য বাজেট গুণক বলতে কী বােঝায়?
- প্রান্তিক আয় কাকে বলে?
- গড় রেভিনিউ কাকে বলে?
- কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আলােচনা করাে।
- বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের মূল কাজগুলি আলােচনা করাে।
- মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দু’টি রাজস্বনীতি লেখো।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .