কোনাে দেশের লেনদেন ব্যালেন্সে ঘাটতি দেখা দিলে সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই ব্যবস্থাগুলি হলাে –
রপ্তানি প্রসার
কোনাে দেশে রপ্তানি প্রসারের জন্য যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় তাকে দু’ভাবে করা যেতে পারে। (ক) দেশগতভাবে রপ্তানি প্রসার এবং (খ) দ্রব্যগত দিক থেকে রপ্তানি প্রসার।
রপ্তানি বাড়ানাের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রপ্তানি-আমদানি চুক্তি করা যেতে পারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন দেশে রপ্তানি বাড়ানাে যেতে পারে। তাছাড়া অন্যভাবেও বিভিন্ন দেশে রপ্তানির চাহিদা বাড়ানাে যেতে পারে। অন্যদিকে, রপ্তানি দ্রব্যগুলির মধ্যে বৈচিত্র্য সাধনের মাধ্যমে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দ্রব্য সংযােজন করার চেষ্টা চালাতে হবে।
আমদানি নিয়ন্ত্রণ
লেনদেন ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে আমদানি দ্রব্যগুলির উপর বেশি হারে শুল্ক চাপালে স্বদেশি মুদ্রায় বিদেশি দ্রব্যগুলির দাম বাড়ে। এর ফলে স্বদেশে বিদেশি দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পায়। অন্যদিকে, আমদানি দ্রব্যের উপর কোটা বা পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ করেও আমদানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ
বৈদেশিক মুদ্রার নিয়ন্ত্রণ করেও লেনদেন উদ্বৃত্তের ঘাটতি সমস্যার সমাধান করা যায়। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে সংকট অবস্থার সৃষ্টি হলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রােধ করতে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ বিধি আরােপ করতে পারে। দেশের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে সব বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে বরাদ্দ ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার সেই বৈদেশিক মুদ্রাকে আমদানিকারকদের মধ্যে বণ্টন করতে পারে। অথবা রপ্তানিকারকদের সব বৈদেশিক মুদ্রাই দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার জন্য রপ্তানিকারকদের নির্দেশ দিতে পারে। তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার উপর আর্থিক কর্তৃপক্ষের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে লেনদেন ব্যালান্সে ঘাটতি সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
আমদানি পরিবর্ত দ্রব্য উৎপাদন বা আমদানি বিকল্পায়ন
পূর্বে যে সকল দ্রব্য বা উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করা হতাে সেই ধরনের দ্রব্য যদি স্বদেশে উৎপাদন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনা যায়। এতে দেশটিও স্বাবলম্বী হয়, কর্মসংস্থান বাড়ে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রােধ হয়।
স্বদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন
কোনাে দেশের সরকার পক্ষ থেকে লেনদেন উদ্বৃত্তের প্রতিকূল অবস্থা দূর করার জন্য বিদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটানাে যেতে পারে। সােনার দাম স্থির থাকলে বিদেশের মুদ্রার হিসাবে কোনাে দেশের মুদ্রার মূল্যের হ্রাসকে অমূল্যায়ন বলে। ধরা যাক, আগে ৪০ টাকা দিয়ে আমেরিকার ১ ডলার পাওয়া যেত। এখন ৫৫ টাকা দিয়ে ১ ডলার পাওয়া গেলে ভারতের টাকার অবমূল্যায়ন ঘটল। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রার মূল্য কমল। এতে বিদেশিদের কাছে ভারতীয় দ্রব্য সস্তা হয়ে যাবে। ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এইভাবে অবমূল্যায়নের ফলে লেনদেন উদ্বৃত্তের হিসাবে প্রতিকূল অবস্থা দূর হতে পারে।
Read More
- সমক পার্থক্য এর সংজ্ঞা দাও।
- লরেঞ্জ রেখা বলতে কী বােঝাে?
- লরেঞ্জ অনুপাত কাকে বলে?
- সমক পার্থক্যের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।
- লরেঞ্জ রেখার সাহায্যে আয় বৈষম্য কীভাবে পরিমাপ করা যায় তা ব্যাখ্যা করো।
- চলতি খাত ও মূলধনি খাতের বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।
- বাণিজ্য উদবৃত্ত ও লেনদেন উদবৃত্তের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।
- লেনদেন হিসাবের চলতি ও মূলধনি খাতের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
- “লেনদেন ব্যালেন্সে সবসময় সমতা থাকে।” – উক্তিটি ব্যাখ্যা করাে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .