জাতিপুঞ্জের সাফল্য
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে
জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপে আন্তর্জাতিক বিরােধের অধিকাংশই নিস্পত্তি হয়েছে। যেমন—(১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিপুঞ্জের চাপেই সােভিয়েত ইউনিয়ন ইরান থেকে তার সৈন্য সরিয়ে নেয়; (২) গ্রিসের সন্ত্রাসবাদীদের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলির সাহায্য পাঠানাে বন্ধ হয় এবং গ্রিসে শান্তি ফিরে আসে; (৩) মিশর ও ইজরায়েলের মধ্যে সুয়েজ খাল নিয়ে বিবাদ মিটে যায়; (৪) ইন্দোচিনে ভিয়েতমিন-ফরাসি বিবাদের মীমাংসা হয়; (৫) রাষ্ট্রপুঞ্জেরই হস্তক্ষেপে কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন প্রভাবিত দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতে পারেনি; (৬) জাতিপুঞ্জের প্রচেষ্টার জন্যই কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকট ঘিরে দুই বৃহৎ শক্তির মুখােমুখি সংঘর্ষ থেকে বিশ্ববাসী রক্ষা পায়।
জনকল্যাণমূলক কাজে
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য উন্নয়ন, বিশ্ব শিশুকল্যাণ-সাধন, বিশ্ব শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন ইত্যাদি নানা জনকল্যাণমূলক কাজকে জাতিপুঞ্জ তার অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
নিরস্ত্রীকরণে
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্র প্রসার রােধে জাতিপুঞ্জ গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে চলেছে। অস্ত্রব্যয়ের অর্থ যাতে উৎপাদনমূলক কাজে নিয়ােজিত হয় তার জন্যই জাতিপুঞ্জ নিরস্ত্রীকরণের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তাহার বিশ্বের মােট সম্পদের পরিমাণ বাড়বে ও মানবজাতির কল্যাণে সাধিত হবে।
উপনিবেশবাদের উচ্ছেদ সাধনে
বিশ্বে উপনিবেশবাদের উচ্ছেদ সাধনে জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার গৌরবজনক অবদান রয়েছে। যেমন—জাতিপুঞ্জের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ হস্তক্ষেপের জন্যই একে একে আফ্রিকার কঙ্গো (১৯৬০ খ্রি.), কেনিয়া (১৯৬৩ খ্রি.) উগান্ডা (১৯৬১ খ্রি.), উত্তর রােডেসিয়া আজকের জাম্বিয়া (১৯৬৩ খ্রি.), দক্ষিণ রােডেসিয়া বা আজকের জিম্বাবােয়ে (১৯৮০ খ্রি.), গােল্ডকোস্ট বা আজকের ঘানা (১৯৫৭ খ্রি.), নাইজেরিয়া (১৯৬০ খ্রি.) ইত্যাদি দেশগুলি উপনিবেশমুক্ত হয়। এশিয়া মহাদেশের ভারত ও পাকিস্তান (১৯৪৭ খ্রি.), শ্রীলঙ্কা (১৯৪৮ খ্রি.), ব্রহ্মদেশ বা আজকের মায়ানমার (১৯৪৮ খ্রি.) ইন্দোনেশিয়া (১৯৪৯ খ্রি.), ভিয়েতনাম (১৯৭৫ খ্রি.), ফিলিপাইন (১৯৫৬ খ্রি.) ইত্যাদি উপনিবেশভুক্ত দেশগুলির স্বাধীনতা প্রাপ্তিতেও জাতিপুঞ্জের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ প্রভাব কাজ করেছে।
মানবাধিকার রক্ষায়
মানবাধিকার রক্ষায় জাতিপুঞ্জের অবদান কম নয়। জাতিপুঞ্জের সনদের সূচনাতেই মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। সনদের ৬৮ নং ধারা মেনে মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সনদের ১৩ নং ধারায় সাধারণ সভাকে মানব অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার ব্যাপারে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সনদের ৬৮ নং ধারা অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ মানব অধিকার রক্ষার জন্য কমিশন নিয়ােগের অধিকারী। জাতিপুঞ্জ মানব অধিকার সংরক্ষণের জন্য সর্বজনীন ঘােষণাপত্র ছাড়াও মানব অধিকার রক্ষার ব্যাপারে শিশুর অধিকারের ঘােষণা, মানসিক প্রতিবন্ধীদের অধিকারের ঘােষণা, নারী বৈষম্যের অবসানের ঘােষণা ইত্যাদি
গ্রহণ করেছে।
উপসংহার
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ জাতিপুঞ্জের উদার সাহচর্যে নতুন পৃথিবী গঠন করতে চায়। ভ্যাল্ডেন বসচ ও হােগনের মতে— জাতিপুঞ্জের সাফল্য আধুনিক সভ্যতার ভবিষ্যতের সঙ্গে সংযুক্ত।
Read More
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .