অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলাে জাতীয় আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থা কায়েম করা। ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রধান সমস্যা হলাে আয় ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুষম বণ্টন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতে নিম্নলিখিত উল্লেখযােগ্য ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হয়েছে।
আয় বৈষম্য হ্রাসের জন্য ভারতে গৃহীত ব্যবস্থা
ন্যূনতম মজুরি আইন প্রবর্তন
ভারতে সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি আইনের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্প এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন আয়ের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে আয় বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভূমি সংস্কার
কৃষিজমির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ, জমিদারি প্রথার বিলােপ, উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বন্টন এবং বর্গাদারদের স্বার্থ রক্ষা করা ইত্যাদির মাধ্যমে আয় বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে ভূমি সংস্কার কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে।
কর কাঠামাের সংস্কার
ভারতীয় কর কাঠামােকে অনেকখানি প্রগতিশীল করা হয়েছে। বিলাসবহুল দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত কর ধার্যের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিদের আয় বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছ। উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের উপর উচ্চহারে কর ধার্য করার
মাধ্যমে আয় বণ্টনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
দরিদ্র ব্যক্তিদের অনুকূলে সম্পদ বণ্টন
দরিদ্র ব্যক্তিদের গৃহ নির্মাণ, নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যের উপর ভরতুকি প্রদান, সহজশর্তে ঋণ প্রদান, তাছাড়া কৃষকদের জন্য সার ও বীজের উপর ভরতুকি প্রদান ইত্যাদি কর্মসূচি সরকার দ্বারা গৃহীত হয়েছে।
সুনির্দিষ্ট প্রকল্প চালু
জাতীয় আয়ের যথাযথ বন্টন ও বৈষম্য হ্রাসের জন্য এবং সর্বোপরি দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ভারত সরকার দ্বারা কতগুলি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। সেগুলি হলাে—(ক) স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্ব-রাজগার প্রকল্প, (খ) স্বর্ণজয়ন্তী শহরী রােজগার প্রকল্প, (গ) জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প, (ঘ) শহরের মহিলাদের স্ব-সহায়তা প্রকল্প ইত্যাদি।
সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত শ্রমিকদের উপযুক্ত নিরাপত্তা প্রদানের জন্য – শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইন, কর্মচারী রাজ্য বিমা আইন, কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড আইন, মাতৃত্বকালীন সুবিধা প্রদানের আইন ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
একচেটিয়া কেন্দ্রিকতা রােধ
একচেটিয়া মূলধনের ক্রমাগত বিনিয়ােগ বৃদ্ধি রােধ করার জন্য ১৯৬৯ সালে M.R.T.P. Act চালু করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৯৯১ সালে একচেটিয়া নিয়ােজিত মূলধনের উর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্য হলাে ব্যাবসার স্বার্থে মূলধন বিনিয়ােগকে উৎসাহিত করা যাতে ব্যাবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।
এই সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ ও বিধি ব্যবস্থার প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকার প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে আয় বৈষম্য হ্রাসের চেস্টা করেছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .