ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান
নানকিং চুক্তির আগে পর্যন্ত সময়ে (১৮৪২ খ্রিঃ) ক্যান্টন বন্দরকে কেন্দ্র করে বিদেশী বণিকদের সঙ্গে চিনাদের যে ব্যবসা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল তাকে ক্যান্টন ব্যাবস্থা বলা হয়।
১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ক্যান্ট বাণিজ্য প্রথার কঠোর নিয়মকানুন গুলি শিথিল করা এবং চিনের সাথে একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার উদ্দেশ্যে ইংরেজ সরকার কর্ণেল ক্যাথকার্টকে পিকিং-এর পাঠায়। কিন্তু পথেই ক্যাথকার্টের মৃত্যু হয়। তারপর ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার একই উদ্দেশ্যে লর্ড ম্যাকার্টনিকে চিনে পাঠায়। কিন্তু এ উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ম্যাকার্টনি ইঙ্গ-চিন বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তদানীন্তন চিনা সম্রাট চিয়ে লুং এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
ইংরেজ সরকার সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালায় ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে। চিনের সাথে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে ইংরেজ সরকার লর্ড আমহার্স্টকে পিকিং এর রাজদরবারে প্রেরণ করে। কিন্তু আমহার্স্টও বিফল মনােরথ হয়ে ফিরে যান। পশ্চাদপদ চিনের সামন্ততান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি চিনের সাথে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রবর্গের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি শক্তি ও সমৃদ্ধির কী ধরনের বৃদ্ধি ঘটেছিল, সে সম্পর্কে চিনের কোনাে ধারণাই ছিল না। এদিকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি পাশ্চাত্য রাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন অঞলে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। একটা কথা বলা দরকার – ইংল্যান্ড যে চিনের সাথে নিছক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার জন্যই চীনে বার বার প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিল, তা নয়। ইংল্যান্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল, চিনে ব্রিটিশ বণিকদের অবাধ বিচরণের পথ পরিষ্কার করা। পুঁজিবাদী ব্রিটেন তার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষার তাগিদেরুদ্ধদ্বার চিনকে উন্মুক্ত করতে চেয়েছিল। সুতরাং আধুনিক, ধনতান্ত্রিক পশ্চিমের সাথে পিছিয়ে থাকা, সামন্ততান্ত্রিক চীনের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
ব্রিটিশ ও আমেরিকার বণিকরা চিনে আফিমের চারা ব্যবসা শুরু করলেন। চিনের সাধারণ মানুষ আফিমের নেশায় ক্রমে আসক্ত হয়ে পড়েন। বিদেশি বণিকদের কাছে আফিমের বেআইন ব্যবসা অসম্ভব লাভজনক হয়ে ওঠে। অফিমের বিনিময়ে তারা চিনের মূল্যবান সম্পদ হস্তগত করতে থাকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত চিনা কর্তৃপক্ষ আফিম ব্যবসায়ে বাধা দেয়। এই অবৈধ আফিম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ১৩৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ চিন যুদ্ধ বা আফিম যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধে ইংরেজদের হাতে চিনের শােচনীয় পরাজয়ের মাধ্যমে ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে।
Read More
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .