নাৎসী দল তথা হিটলারের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক এ. জে. পি. টেলর, অধ্যাপক ব্রেকার, অধ্যাপক ফ্রাঙ্কেল, অধ্যাপক এলান বুলক প্রমুখ। ঐতিহাসিক ভিন্ন ভিন্ন মত পােষণ করেছেন। এইসব জটিল বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে হিটলারের সাফল্যের কারণগুলি সাধারণভাবে আলােচনা করা যেতে পারে।
হিটলার বা নাৎসী দলের সাফল্যের কারণ
ভার্সাই সন্ধি
ফরাসী ঐতিহাসিক মরিস বুমন্ট, জার্মান ঐতিহাসিক ব্যারাক্ল, অধ্যাপক ই. এইচ. কার প্রমুখ মনে করেন যে, হিটলারের সাফল্যের প্রধান কারণ হল জার্মান জাতির ওপর অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি আরােপ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শােচনীয় পরাজয় এবং তারপর ভার্সাই সন্ধির গ্লানি জার্মান জাতির আত্মমর্যাদায় তীব্র আঘাত হানে। শুরু থেকেই জার্মান দেশপ্রেমিকরা এই. সন্ধির বিরােধিতা করতে থাকে এবং নাৎসী দল এই সন্ধির বিরােধিতা করেই পাদপ্রদীপের আলােয় উঠে আসে।
অপরপক্ষে, অধ্যাপক এ. জে. পি. টেলর বলেন যে, ভার্সাই সন্ধির বিরুদ্ধে যতটা প্রচার করা হয়, ভার্সাই সন্ধি ততটা নির্মম বা জার্মান স্বার্থবিরােধী ছিল না। এর অনেকগুলি শর্ত সংশােধিত হয়েছিল এবং বহু শর্তের কোন প্রয়ােগই হয়নি। এছাড়া, ভার্সাই সন্ধি সম্পাদন (১৯১৯ খ্রিঃ) এবং হিটলারের ক্ষমতা লাভের মধ্যে চৌদ্দ বছরের ব্যবধান ছিল। ততদিনে ভার্সাই চুক্তির বিরােধী জার্মান জাতির প্রতিশােধ স্পৃহা ধূসর হয়ে যায়।
কমিউনিস্ট ভীতি
কমিউনিস্টদের সম্পর্কে জার্মানদের মনে প্রবল ভীতি ছিল। কমিউনিস্ট নেতৃত্বে কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন, শিল্প ধর্মঘট প্রভৃতিকে সাধারণ মানুষ এবং শিল্পপতি ও ভূ-স্বামীরা ভাল নজরে দেখেনি। তারা মনে করত যে, একমাত্র নাৎসীরাই কমিউনিস্টদের প্রতিহত করতে পারে। এই কারণে তারা নানাভাবে নাৎসীদের সাহায্য
অথনৈতিক সংকট
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানীতে প্রবল অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। মুদ্রাস্ফীতি, নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির দুষ্প্রাপ্যতা ও অগ্নিমূল্য, সীমাহীন বেকারত্ব, শিল্প ধর্মঘট প্রভৃতির ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। এই অবস্থায় হিটলার বেকারদের কর্মসংস্থান, করভাবে নিপীড়িত কৃষকদের কর-মকুব ও শিল্পপতিদের শিল্পে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়ে নিজ দলে টানেন। এইসব মানুষ সর্বতােভাবে তার সমর্থনে অগ্রসর হয়। হিটলারের উত্থানের মূলে অনেকে বিশ্বব্যাপী মন্দার কথা বলেন। বলা বাহুল্য, এ মত ঠিক নয়। হিটলারের উত্থানের মূলে অনেকে বিশ্বব্যাপী মন্দার কথা বলেন। বলা বাহুল্য, এ মত ঠিক নয়। অধ্যাপক এ. জে. পি. টেলর বলেন যে, বিশ্বব্যাপী মন্দার অনেক আগেই জার্মান রাজনীতিতে জটিলতার সূচনা হয় এবং এই অর্থনৈতিক মন্দা দিয়ে হিটলারের উত্থানের ব্যাখ্যা করা যায় না।
চিনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব
সান-ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বে শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির সক্রিয় সহযােগিতায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে চিনে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের চিনের এই প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভিয়েতনামিরা ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমদিকে ভিয়েতনাম সংকটে হস্তক্ষেপ না করে নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু মাও-জে-দঙ-এর নেতৃত্বে চিনে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত (১৯৪৯ খ্রি.) হলে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে রুশ মদতে সাম্যবাদের প্রসার ঘটতে শুরু করলে আমেরিকা চুপ করে থাকতে পারেনি। জেনেভা সম্মেলনের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরােক্ষভাবে দক্ষিণ ভিয়েনামে ন-দিন-দিয়েম সরকারকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে শুরু করতে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চরমে পৌছায়।
পটল্ডাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হওয়ার পর জাপান ইন্দোচিনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে (১৯৪৫ খ্রি.)। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে গিয়ে জাপান আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। পটল্ডাম সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, জাপানে ইন্দোচিন থেকে সরে এলে ইন্দোচিনে ১৭° অক্ষরেখা বরাবর উত্তরে কুয়ােমিনটাং চিন এবং দক্ষিণে ব্রিটেন দায়িত্ব নেবে। কিন্তু ফ্রান্স ইন্দোচিনে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেত চাইলে ব্রিটেন দক্ষিণ ইন্দোচিন থেকে সরে যায় এবং কুয়ােমিনটাং চিনও উত্তর ইন্দোচিন হাে-চি-মিনের হাতে তুলে দেয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .