প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদানের ভূমিকা
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার অপ্রতুলতার কারণে আমাদের তৎকালীন শিলালিপি, মুদ্রা, স্থাপত্য, বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষগুলি খনন করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। খনন দ্বারা প্রাপ্ত সমকালীন ঐতিহাসিকদের রচনা ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক সাহিত্যকীর্তি হল মূলত ইতিহাসের সাহিত্যিক উপাদান নামে পরিচিত।
প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ধর্মীয় সাহিত্য, ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য ও বৈদেশিক বিবরণী। ধর্মীয় সাহিত্যগুলির মধ্যে ঋগবেদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, স্মৃতিশাস্ত্র প্রভৃতি থেকে তৎকালীন যুগের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্যের সংখ্যা ও প্রচুর।
এগুলির মধ্যে কলহনের ‘রাজতরঙ্গিণী’, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস’, অশ্বঘােষের বুদ্ধচরিত’, বানভট্টের হচিরত’, কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্, সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত’, প্রভৃতি গ্রন্থ উল্লেখ যােগ্য। এই সব গ্রন্থ থেকে তৎকালীন যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজ, অর্থনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি শিল্পকলা প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।
আবার ভ্রমণ ও অন্যান্য কারণে ভারতে আগত বিভিন্ন পর্যটক ও পণ্ডিতগণের রচনার মধ্যে মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’, প্লিনির ‘প্রাকৃতিক ইতিহাস’, ফা-হিয়েনের ‘ফু-কিউ-কি, হিউয়েন সাঙ-এর ‘সি-ইউ-কি, অলবেরুনির ‘তহ-কিক-ই-হিন্দ’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে ভারতীয় বন্দর, ব্যাবসাবাণিজ্য, সামাজিক রীতিনীতি, মানুষের আচার আচরণ, ধর্ম বিশ্বাস, বিভিন্ন রাজার শাসন কাল প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। তবে সাহিত্যিক উপাদনগুলির মধ্যে লেখকের ব্যক্তিগত ধারণা, প্রচলিত বিশ্বাস, সঠিক পর্যবেক্ষণের অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় ঐতিহাসিকগণ অধিক গুরুত্ব দেন না।
তবে সাহিত্যিক উপাদানগুলির গুরুত্বও কম নয়। কারণ তৎকালীন বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানগুলির তুলনা করার ক্ষেত্রে সাহিত্যিক উপাদানগুলি বিশেষভাবে সাহায্য করে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .