ভূমিকা :- নবজাগরণের মুক্ত হাওয়া জীবনের যে দিকগুলিকে সর্বাধিক আন্দোলিত করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম হল সাহিত্য ও শিল্প। বস্তুত পঞ্চদশ শতকের পরবর্তী কালেই আধুকি সাহিত্য ও শিল্পরসের উদ্ভব ঘটেছে। ইতিপূর্বে জীবন ছিল ধর্মের সর্বগ্রাসী বন্ধনে আবদ্ধ। সাহিত্য ও শিল্পের মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্মভিত্তি ক ভাবনা ও বিশ্বাস। নবজাগরণের ফলে জন্ম নেয় মানবতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ। ইহজীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি সাহিত্যের প্রধান বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। তেমনি গাছ-পাতা, পশু-পক্ষী, নদী-পাহাড়, চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয়বস্তু সাহিত্য ও শিল্পের অঙ্গনকে পুষ্ট করে। গীর্জার নিয়ন্ত্রণমুক্ত, ধর্মীয় বিশ্বাসের না-দেখা না-জানা বিষয়বস্তুকে পরিত্যাগ করে। গীর্জার নিয়ন্ত্রণমুক্ত, ধর্মীয় বিশ্বাসের না-দেখা না-জানা বিষয়বস্তুকে পরিত্যাগ করে সাহিত্য ও শিল্প হয়ে ওঠে। প্রকৃত অর্থেই জীবনমুখী। শিল্পের জন্য শিল্প’— এই বােধ শিল্পকলার জগতে নিয়ে আসে অভূতপূর্ব বৈচিত্র্য ও প্রাণস্পন্দন।
সাহিত্যে নবজাগরণ
ইতালী :- নবজাগরণের যুগে মানবতাবাদী তথা জীবনমুখী সাহিত্যচর্চার প্রধান মাধ্যম। ছিল গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষা। ইতালীর উর্বর ভূমিতে সাহিত্যে যে নবজীবন লাভ করে, ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে ইউরােপের অন্যান্য দেশে। আরাে পরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনুভূত হয় তার প্রাণস্পন্দন। ইতালীর মানবতাবাদী সাহিত্যিকদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন দান্তে, পেত্রার্ক, বােকাচিও, লরেজ্ঞাে ভাল্লা প্রমুখ। কবি দান্তে তার অমর কাব্যগ্রন্থ ‘ডিভাইন কমেডি’ রচনা করে ইতালীয় ভাষায় কাব্যচর্চাকে নতুন গতি প্রদান করেন। পেত্রার্ক-এর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘আফ্রিকা। ল্যাটিন ভাষায় রচিত এই গ্রন্থে জীবনের প্রেম-প্রীতি, ভালবাসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি গ্রীক মহাকাব্য ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’-কে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন। এতঃপর ল্যটিন ভাষার সাহিত্যচর্চার প্রবণতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। জীবনমুখী সাহিত্যে তার অবদানের কথা স্মরণ করে পেত্রার্ককে নবজাগরণের জনক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। বস্তুত তিনি ছিলেন আধুনিক মননশীলতার প্রথম প্রতিভা।
এই কারণে ঐতিহাসিক ডুরান্ট বলেছেন : ‘পেত্রার্কই ছিলেন প্রথম মানবতাবাদী শিক্ষাবিদ; মানুষের জীবনকে ভিত্তি করে সাহিত্যসৃষ্টির অধিকার তিনিই প্রথম প্রচার করেন।
পেত্রার্ক-এর সুযােগ্য শিষ্য ছিলেন বােকাচিও। তাঁর সুবিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হল ‘ডেকামরণ। লাটিন ভাষায় রচিত এই গ্রন্থের পটভূমি ছিল ইতালীর সমৃদ্ধশালী নগরী। ফ্লোরেন্সের প্লেগ। মহামারী এই ব্যাধির পশ্চাৎপটে তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন। চার্চের কৃচ্ছসাধনের আদর্শের পরিবর্তে বােকাচিও ভােগবাদী জীবনের আবশ্যিকতাকে তুলে ধরেছেন। তাই কেবল কাব্য হিসেবে নয়, চরম হতাশার মাঝেও বেঁচে থাকার প্রেরণার উৎস হিসেবে এই কাব্যগ্রন্থ অনন্য। লরেঞ্জো ভাল্লা’র লেখনীর প্রধান উপাদান ছিল ধর্ম। তত্ত্ব ও তথ্যের সহায়তায় তিনি প্রচলিত ধর্ম-বিশ্বাসের ভ্রান্ত দিকগুলির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। এ যুগের প্রখ্যাত ইতালীয় রাষ্ট্রনীতিবিদ ছিলেন ‘ম্যাকিয়াভেলী তিনি ‘দি প্রিন্স’ নামক গ্রন্থে নতুন রাষ্ট্রদর্শন প্রচার করেন।
অন্যান্য দেশের সাহিত্যচর্চা :- নবজাগরণের ফলে সৃষ্ট জীবনবাদী সাহিত্যের ধারা কালক্রমে ইতালীর সীমা অতিক্রম করে আল্পস্ পর্বতের উত্তরের দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষাশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইতালীর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলিতে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে জীবনবাদী সাহিত্যের স্রোত ঐসব দেশে প্রবাহিত হয়। ফ্রান্স জার্মানী, ইংল্যাণ্ড প্রভৃতি দেশের কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিকগণ কেবল নবজীবনের ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে যাননি, পরন্তু তাদের লেখনীতে সাহিত্যের অঙ্গন আরও পরিশীলিত হয়ে ওঠে। ইতালীর সাহিত্যের ভােগবাদী জীবনদর্শন এক্ষেত্রে আদর্শবাদ ও সততা দ্বারা পরিশুদ্ধ হয়ে আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।
ফ্রান্স :- প্রাক্-নবজাগরণ পর্বে ফ্রান্সের একদল ভ্রাম্যমাণ কবি প্রথম প্রতিবাদের ধ্বনি তােলেন। এঁদের বলা হত ‘ ট্রডাের’ (চারণ কবি)। এঁদের রচিত ও গীত কবিতাগুলিতে চার্চ ও যাজকদের প্রতি ঈষৎ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ফুটে উঠত। তাই চার্চ এদের ধর্মচ্যুত ঘােষণা করে। অবশ্য পােপতন্ত্রের বিরূপতা সত্ত্বেও এই চারণকবির দল গীতরচনা বন্ধ করেননি। নবজাগরণের ফলে ফরাসী সাহিত্যে প্রতিবাদ ও আশার ধ্বনি শুত হয়। জিন গ্যারিসন, লেফেভর, লিভিয়ন। প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক ফরাসী সাহিত্যে নবজীবনবাদের ধারা প্রবাহিত করেন। নবজাগরণ যুগের শ্রেষ্ঠ ফরাসী সাহিত্যিক ছিলেন রেবেলিয়াস। তাঁর অন্যতম সমালােচনামূলক গ্রন্থ হল ‘গারগাস্টুয়া’, যাতে তিনি পােপতন্ত্রের তীব্র সমালােচনা করেন। হল্যাণ্ডের ডেসডেবিয়াস ইরামাস (১৪৩৭-১৫৩৬ খ্রীঃ) ছিলেন নবজাগরণের । যুগের প্রখ্যাত পণ্ডিত। তার অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘প্রেইজ অব ফলি। এই গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত কঠোর ও স্পষ্ট ভাষায় চার্চের ভণ্ডামি ও ধর্মের নামে অনাচারের সমালােচনা করেন। তিনি টীকাসহ গ্রীকভাষায় লিখিত খ্রীষ্টানদের ধর্মশাস্ত্র নিউ টেষ্টামেন্টের একটি অনুবাদ প্রকাশ করে ধর্মসংস্কারের পথ প্রশস্ত করে দেন। সে যুগের আর এক প্রখ্যাত জীবনবাদী কবি ছিলেন স্পেনের সার্ভেণ্টি। ডন কুইকজোট’ নামক উপন্যাসে তিনি মধ্যযুগীয় নাইটতন্ত্রের অন্তনিহিত ভণ্ডামির মুখােশ খুলে দেন।
ইংল্যাণ্ড : মানবতাবাদী ও জীবনমুখী সাহিত্যরচনার ক্ষেত্রে ইংল্যাণ্ড ছিল একটি অগ্রণী দেশ। ইংরেজী ভাষায় এ ধরনের রচনাকাল হিসেবে উইলিয়াম ল্যাল্যাণ্ড-এর নাম সর্বাগ্রে স্মরণ করা হয়ে থাকে। কৃষক পিয়ার্সের স্বপ্ন’ নামক কবিতা রচনা করে তিনি সাড়া ফেলে দেন। এই কবিতায় তিনিই সর্বপ্রথম সর্বহারা কৃষকশ্রেণীর সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরেন। তাঁর রচনায় সামন্ততন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত করে কৃষকশ্রেণীর সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরেন। তাঁর রচনায় সামন্ততন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত করে কৃষকশ্রেণীর মুক্তির পথ দেখানাে হয়। মধ্যযুগের অন্তিম লগ্নের ইংরেজ কবি চসার (Chaucer, 1340-1400 A.D.) তার বিভিন্ন রচনায় মধ্যযুগের ভ্রান্তি ও পাপচারকে জনসমক্ষে তুলে ধরেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘দি ক্যান্টারবেরী টেলস্। চসারই প্রথম। ইংরেজ কবি যিনি কবিদের ঊর্ধ্বমুখী দৃষ্টিকে মাটির পৃথিবীতে টেনে আনেন। ধুলােমাখা পৃথিবীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ইত্যাদি তাঁর কাব্যের রাজকুমারী হয়ে আসে। মানুষে মানুষে বিভিন্নতা আছে, বিভিন্নতার জন্য আছে বৈচিত্র্য। আর এই বৈচিত্র্যই হল জীবনের আনন্দ-সুধা,–এই সত্যকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন। আবার একাধারে সাহিত্য ও বিজ্ঞানকে সেবা করেছেন ফ্রান্সিস বেকন (১৫৬১-১৬২৬ খ্রীঃ)। হিষ্টি অব হেনরী সেভেন’ রচনা করে তিনি ইতিহাস-সাহিত্যের অঙ্গনকে উজ্জ্বল করেন। এডভান্সমেন্ট অব লার্নিং গ্রন্থে তিনি তর্ক-বিচার দ্বারা জ্ঞানার্জনের পথ নির্দেশ করেন। অক্সফোর্ড ও কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীকভাষা ও সাহিত্যচর্চার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। সে যুগের আর এক বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক টমাস মুর। মুরের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (Utopia—অস্তিত্বশূন্য দেশ)। এই গ্রন্থে তৎকালীন রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থার তীব্র সমালােচনা করা হয়। সেই সঙ্গে তিনি বর্তমানকালে প্রচলিত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পৌরজীবন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার তত্ত্ব তুলে ধরেন। পরবর্তীকালে বিশ্ববিখ্যাত কবি নাট্যকার, উইলিয়াম সেক্সপীয়ারের হাতে ইংরেজী সাহিত্য তার চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
শিল্পে নবজাগরণ
ভাষা ও সাহিত্যের মত শিল্পকলার ক্ষেত্রেও নবজাগরণের প্রকাশ দেখা যায়। মধ্যযুগের শিল্পকলার গতি স্বচ্ছন্দ বা সাবলীল ছিল না। শিল্পীর স্বাধীনতা ছিল নিয়ন্ত্রিত। শিল্পের বিষয়বস্তু ছিল একান্তই ধর্মকেন্দ্রিক। ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা বা ধর্মীয় ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার ক্ষমতা শিল্পীর ছিল না। ফলে স্থাপত্য, ভাস্কর্য বা চিত্রশিল্পীরা তাঁদের শিল্পকার্যকে গতানুগতিকতার নিগড়ে আবদ্ধ করে ফেলেছিলেন। গীর্জা বা প্রাসাদের নির্মাণে, কিংবা কোন মূর্তি তৈরীতে অথবা চিত্রাঙ্কনে ফুটে উঠত গথিতশৈলী কিংবা নিষ্প্রাণ ও কৃশ কিছু সাধুসন্তের দেহ অথবা মেরী বা যীশুর বেদনাদীর্ণ প্রতিচ্ছবি। নবজাগরণ সেই গতানুগতিকতা ভেঙে দিয়ে নিয়ে আসে পরিবর্তনের ধারা। নিষ্প্রাণ শিল্পচর্চা হয়ে ওঠে প্রাণময়। শুরু হয় জীবনমুখী শিল্পের চর্চা। ধর্মীয় অনুশাসনের বন্ধনমুক্ত শিল্পে প্রাধান্য পায় প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রকাশ। নর-নারীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রকৃতির বিভিন্ন রুপ, জীবজন্তু, নদী-পাহাড় ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে শুরু হয় নতুন শিল্পের সাধনা। কোন আরােপিত নির্দেশ নয়, শিল্পীর কল্পনা ও মন, শিল্পীর চোখ ও বিচার তার শিল্প-প্রতিভাকে প্রকাশের পথ দেখায়। অবাস্তব ও অদেখা কোন কিছু নয়; অতঃপর শিল্পে পরিস্ফুটিত হয় চলমান বাস্তব জীবন ও জগতের ছবি।
ভাষা ও সাহিত্যের মত শিল্পেও নবজাগরণের পথপ্রদর্শক ছিল ইতালী। রেনেসাঁস-আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ফ্লোরেন্সনগরী এক্ষেত্রেও ছিল অগ্রণী। নবজাগরণের যুগের প্রখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিওটি, বাত্তিসেলী, জিবার্টী, ব্রামানটি, টাইটিয়ান, লিওনার্দো-দা-ভিঞ্চি, রাফায়েল, মাইকেল এ্যাঞ্জেলাে প্রমুখ।
ফ্লোরেন্স-এর চিত্রবিদ জিওটিকে চিত্রাঙ্কনে ‘নবজাগরণের আদি রূপকার’ বলা চলে। ত্রয়ােদশ শতকের এই শিল্পী তার কাজে ধর্মের প্রতিবর্তে বাস্তব জীবনের ঘটনাবালীকে বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেন। ফ্লোরেন্সের আর এক প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ছিলেন বাত্তিসেলী। ফ্লোরেন্সের শাসক লরেঞ্জো’র পৃষ্ঠপােষকতায় বাক্তিসেলী ‘ভেনাসের জন্ম’ নামক জীবনমুখী চিত্র অঙ্কন করে চিত্রাঙ্কনের ইতিহাসে নবযুগের প্রবর্তন করেন। স্থাপত্যবিদ ব্রামানটি রােমের সেন্ট পিটার গীর্জায় তাঁর আধুনিক স্থাপত্য-সৌন্দর্য ফুটিয়ে তােলেন। টাইটিয়ান (১৪৭৭-১৫৩৩ খ্রীঃ) ছিলেন নবজাগরিত সংস্কৃতির অন্যতম চিত্রবিদ। তাঁর বিখ্যাত চিত্র ‘থ্রি এজেস অব মেন্।
নবজাগরিত-সংস্কৃতি স্রষ্টা ও প্রচারক হিসেবে তিনটি চিরস্মরণীয় নাম হল লিওনার্দো-দা-ভিওি, এ্যাঞ্জেলাে এবং রাফায়েল। এদের সৃষ্টিকর্মে নবজাগরিত-আদর্শের পূর্ণ প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। মেডিকি রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপােষকতা ও ফ্লোরেলে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের উদারনীতি এইসব শিল্পীর স্বাধীন শিল্পচর্চার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিল। লিওনার্দো দা-ভিঞ্চি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ভাস্কর্য, চিত্রশিল্প, বিজ্ঞান, কাব্য, দর্শন ইত্যাদি জীবনের বিভিন্ন সুকুমার কলায় ছিল তার গভীর জ্ঞান। অঙ্কিত দু’টি চিরকালীন চিত্র হল ‘শেষ ভােজন এবং মােনালিসা’। প্রথমটি মহান যীশুর প্রাক্-মৃত্যু ভােজনের দৃশ্য এবং দ্বিতীয়টি একটি স্মিতহাস্যময় নারীর মুখ। ছবি দুটিকে কেন্দ্র করে চিত্ররসিকেরা আজও আলােচনায় মুখর। মাইকেল এ্যাঞ্জেলাে (১৪৭৫-১৫৬৪ খ্রীঃ) ছিলেন প্রখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রবিদ। রােমের সিস্টাইন গীর্জার দেওয়ালে খােদিত ‘ভাস্কর্য-চিত্র এবং শেষ বিচার’ নামক চিত্রটি তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। কথিত আছে, গীর্জার চিত্রাঙ্কন করার সময় অত্যধিক শ্রমের ফলে তিনি অকাল বার্ধক্যপ্রাপ্ত হন এবং কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এ যুগের আর এক স্মরণীয় শিল্পী। ছিলেন ইতালীর রাফায়েল (১৪৮৩-১৫২০ খ্রীঃ)। তাঁর আঁকা যীশুখ্রীষ্ট্রের মাতা। ‘ম্যাডােনা চিত্রটি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রাঙ্কন হিসেবে বিবেচিত হয়। রেনেসাঁস যুগের সূচনা পর্বের শিল্পীরা তাদের সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে গ্রহণ করলেও, সেগুলিকে মধ্যযুগের ধর্মীয় বন্ধন দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল না। শিল্পীরা ধর্মীয় বিষয়বস্তুর সাথে তাদের স্ব-স্ব কল্পনার মিশ্রণে সেগুলিকে যে বাস্তবতা ও জীবনমুখী চরিত্র দিয়েছেন, তা নবজাগরণের মানবতাবাদকেই প্রকাশিত করেছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .