প্রাচীন ভারতে অখণ্ড ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সাম্রাজ্য গঠনে মৌর্য সাম্রাজ্য ছিল প্রথম পদক্ষেপ। মৌর্যযুগের শাসন ব্যবস্থার মূল কাঠামাে গড়ে উঠেছিল চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালের মধ্যেই। সম্রাট অশােকের সময় সেই কাঠামাে মূলত অপরিবর্তিতই থেকে যায়, তিনি প্রজামঙ্গলের জন্য ও ধর্মনীতি প্রচারের জন্য শাসন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আরও উন্নত করে তুলেছিলেন মাত্র।
মৌর্য যুগের শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক
মৌর্যযুগের শাসন ব্যবস্থার দু’টি দিক ছিল – কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক।
1. রাজার স্থান ও দক্ষতা
মৌর্যযুগের রাজারা তাদের ক্ষমতাকে ভগবান প্রদত্ত বলে প্রচার করবার চেষ্টা করতেন না। কিন্তু শাসন ব্যবস্থায় রাজারা ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতেন। তিনি অর্থাৎ রাজা ছিলেন সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহক, প্রধান বিচারপতি, প্রধান সেনাপতি এবং প্রধান আইনপ্রণেতা। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে শাসনকার্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
2. মন্ত্রী, অমাত্য ও মন্ত্রী পরিষদ
রাজা স্বেচ্ছামূলকভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন না। শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবার জন্য রাজা সর্বদাই মন্ত্রী ও অমাত্য এবং মন্ত্রী পরিষদের সঙ্গে সহযােগিতা করতেন। মন্ত্রী বা অমাত্যদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উচ্চপদস্থ ছিলেন মহামন্ত্রীরা। মন্ত্রী ছাড়াও একটি মন্ত্রী পরিষদের উল্লেখ পাওয়া যায়, যে পরিষদের সঙ্গে রাজা প্রয়ােজনে শলাপরামর্শ করতেন।
3. উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী
শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাজা অনেক। উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী নিয়ােগ করতেন। যেমন হিসাবপরীক্ষক, পুরােহিত, পরিদর্শক প্রমুখ।
4. গুপ্তচর বিভাগ
এত বড়াে সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার জন্য মৌর্য সম্রাটরা বহুসংখ্যক গুপ্তচর নিয়ােগ করতেন। এরা সেনাবাহিনী ও দেশের সমস্ত সংবাদ রাজাকে সরবরাহ করত।
রাজস্ব
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের মধ্যে উত্তর ভারতের অর্থনীতির চরিত্র ছিল কৃষিভিত্তিক। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে রাজস্ব ও অন্যান্য কর আদায় করার কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় যে রাষ্ট্রই ছিল জমির মালিক। রাজা ও কৃষকের মধ্যে এক-ষষ্ঠাংশ অথবা এক-চতুর্থাংশ রাজস্ব রূপে নির্দিষ্ট হতাে। এই রাজস্ব ‘ভাগ’ নামে পরিচিত ছিল। ভূমি রাজস্ব ছাড়া বাণিজ্যশুল্ক, জন্ম ও মৃত্যুকর, জলকর, বাস্তুকর প্রভৃতি থেকেও রাজস্ব আদায় হতাে।
বিচার ব্যবস্থা
রাজা ছিলেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিচারক। তিনি শাস্ত্রমতে ব্রাত্মণ ও অভিজ্ঞ মন্ত্রীদের সাহায্যে বিচারকার্য সম্পাদন করতেন। রাজকীয় বিচারালয় ছাড়াও বিভিন্ন জনপদে ও নগরে বিশেষ বিশেষ নিম্ন বিচারালয় ছিল।
সামরিক সংগঠন
মেগাস্থিনিসের বিবরণ থেকে চন্দ্রগুপ্তের সামরিক সংগঠন ও শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য ছয় লক্ষ পদাতিক, ত্রিশ হাজার অশ্বারােহী, নয় হাজার হাতি ও বহুসংখ্যক রথ ছিল। ত্রিশ জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি পরিষদের ওপর সামরিক বিভাগ পরিচালনার ভার ছিল। এই পরিষদ আবার ছয়টি সমিতিতে বিভক্ত ছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .