মগধের নন্দবংশের শেষ রাজা ধননন্দ ছিলেন ধনলিঙ্গু ও অত্যাচারী। এ কারণেই তার বিরুদ্ধে প্রজাদের মনে অসন্তোষ জন্মেছিল। এই অসন্তোষের সুযােগ নিয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৪ অব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নন্দরাজ ধননন্দের শাসনের উচ্ছেদ করে মৌর্য বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
সাম্রাজ্যের সংহতিদান
ভারত থেকে গ্রিক বিতাড়ন
আলেকজান্ডার ভারত ত্যাগের কিছুকাল পরেই স্থানে স্থানে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল, কারণ ভারতবাসীরা বৈদেশিক শাসনকে কোনাে সময়েই বরদাস্ত করতে পারেনি। চন্দ্রগুপ্ত এই সুযােগে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন এবং কয়েকটি যুদ্ধে তাদের পরাজিত করে গ্রিক শাসনের অবসান ঘটাতে সক্ষম হন।
সেলুকাসের সঙ্গে যুদ্ধ
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য বিভিন্ন সেনাপতির মধ্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। সেলুকাস সাম্রাজ্যের পূর্বাংশের অধিপতি হয়েছিলেন। চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে তার সন্ধি হয়। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী সেলুকাস চন্দ্রগুপ্তকে হিরাট, কাবুল, কান্দাহার ও মাকরান এই চারটি প্রদেশ প্রদান করেন। চন্দ্রগুপ্তও তাকে পাঁচটি হাতি উপহার দেন। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উভয়ের মধ্যে এক বৈবাহিক সম্বন্ধও স্থাপিত হয়।
মালব, সৌরাষ্ট্র, মহীশূর, তিনেভেলি জয়
উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রিক-শাসনের অবসান ঘটিয়েই চন্দ্রগুপ্ত নিশ্চেষ্ট ছিলেন না। পর পর অভিযান পরিচালনা করে তিনি মালব, সৌরাষ্ট্র এবং মহীশূরের কিয়দংশ তার সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন।
উত্তরাপথ, অবন্তী,দাক্ষিণাপথ, প্রাচ্য ও কলিঙ্গ জয়
অশােকের রাজত্বকালে উত্তরাপথ, অবন্তী, দক্ষিণাপথ, প্রাচ্য ও কলিঙ্গ এই পাঁচটি প্রদেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। অশােক কলিঙ্গ জয় করেছিলেন, সুতরাং এটা স্পষ্ট যে কলিঙ্গ ছাড়া বাকি প্রদেশগুলি চন্দ্রগুপ্তের সময়েই মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে চন্দ্রগুপ্ত কতদূর রাজ্যবিস্তার করেছিলেন তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।
চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব
যােদ্ধা, সুদক্ষ শাসক ও প্রজাহিতৈষী রাজা হিসাবে চন্দ্রগুপ্ত ভারতীয় সম্রাটদের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ সম্রাট বলে স্বীকৃত হয়েছেন। তিনি অসাধারণ প্রতিভাবান ও শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন। সামান্য অবস্থা থেকে তিনি যথেষ্ট শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হন এবং অত্যাচারী নন্দরাজকে ধ্বংস করে প্রজামঙ্গলকারী সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। বিদেশির কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে তিনি উত্তর-পশ্চিম ভারতের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন। সেলুকাসের আক্রমণ প্রতিহত করে তিনি কেবল দেশকে বিদেশি শাসনের গ্লানি থেকে মুক্ত করেননি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সম্মান বাড়িয়েছিলেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .