এডিস এজিপটাই (Aedes Aegepti) নামের বিশেষ একধরনের মশা এই রােগের মাধ্যম। কালাে শরীরের ওপর সাদা ছােপ দেখে চেনা যায় এই মশা। ফেলে। রাখা মাটির পাত্র, ডাবের খােলা, ভাঙা বােতল, জলের পাত্র বা ফুলদানিতে জমে থাকা জলে ডিম পাড়ে এডিস মশা। এরা কামড়ায় দিনের বেলায়। এই মশা উড়তে পারে বড়জোর একশ মিটার পর্যন্ত। সঠিক ব্যবস্থা নিলে এডিস মশাকে ধ্বংস করা তাই খুব সহজ।
ডেঙ্গু রােগ কীভাবে ছড়ায় :- রােগ ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রক্ত থেকে, এডিস মশার মাধ্যমে। জ্বর শুধু হবার ১৮ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু করে তিন-চারদিন পর্যন্ত রােগী রােগ ছড়াতে পারে। মশা রােগীকে কামড়াবার সঙ্গে সঙ্গে অন্য মানুষকে কামড়ালে কিন্তু রােগ ছড়াবে না। আক্রান্ত মানুষকে কামড়াবার প্রায় ১২ দিন পর থেকে এডিস মশা রােগ ছড়াতে শুরু করে। এই সময় ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তাই একবার রােগ ছড়াতে শুরু করলে এডিস মশকবাহিনীকে পুরােপুরি ধ্বংস করা না গেলে ডেঙ্গুর আক্রমণ একেবারে বন্ধ করা অসম্ভব।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার না হওয়া, যেখানে সেখানে কৃত্রিম জল জমে থাকা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব—এসব কারণে কোনও এলাকায়। একবার শুরু হলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই রােগ।
: ডেঙ্গু রােগের উপসর্গ :
ডেঙ্গুজ্বর ঃ হঠাৎ করে বেশি জ্বর আসে। সঙ্গে খুব বেশি মাথাব্যথা, শরীরের যন্ত্রণা, গাঁটে গাঁটে তীব্র ব্যথা। চোখের চারপাশে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। সঙ্গে গা গােলানাে, বমি, চোখ নাখ দিয়ে জল পড়া, আলােতে চোখের কষ্ট, খিদে কমে যাওয়া, ঘুম না আসা, মানসিক অবসাদ—এসব উপসর্গ দেখা দেয়।
এই জ্বরে শরীরে, বিশেষ করে গাঁটগুলিতে এত যন্ত্রণা হয় যে সুস্থ সবল মানুষ জুরে আক্রান্ত হবার দু একদিনের ভেতর চলাফেরা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। জ্বর
থাকতে পারে ৭-৮ দিন পর্যন্ত। সব সময় যে রােগের উপসর্গগুলাে খুব তীব্র হয় তা কিন্তু নয়। অনেক সময় অল্প জ্বর ও সাধারণ ব্যথাবেদনা নিয়েও এই রােগ হতে পারে।
ডেঙ্গু হতে পারে যে কোনাে বাচ্চাদের শরীরে।
তিন থেকে তেরাে বছর বয়সের বাচ্চারা আক্রান্ত হয় এতে। প্রথম তিন-চারদিন সাধারণ ঠান্ডা লেগে জ্বরের মতাে মনে হয় এই রােগকে। তারপর হঠাৎ করে শুরু হয় শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণ। নাক বা কান দিয়ে রক্ত পড়া, চামড়ার নীচে রক্তপাত, রক্তবমি, কালাে পায়খানা—এরকম মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয়। রােগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে দ্রুত। এরকম রােগী দ্রুত চেতনা হারিয়ে কোমাতে চলে যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার। ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভারে আক্রান্ত বাচাদের শতকরা আট থেকে দশজনই মারা যায়।
ডেঙ্গু রােগ প্রতিরােধ :- দুর্ভাগ্যবশত ডেঙ্গুজুর প্রতিরােধের কোনাে টিকা (Vaccine) নেই। এডিস এজিপ্টাই মশককুলকে সমূলে ধ্বংস না করতে পারলে তাই এই রােগ প্রতিরােধ করা সম্ভব নয়। বাড়িতে ও এলাকায় যাতে নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
ভাঙ্গা পাত্রে জল জমতে থাকলে তা ফেলে দিয়ে পাত্রগুলাে নষ্ট করে ফেলুন। এডিস মশার ডিম মারতে ডি.ডি.টি-র তেলে কাজ হবে না। এক্ষেত্রে মশা ডিম পাড়ে এমন জমা জলে বিশেষ ধরনের কীটনাশক নিয়মিত স্প্রে করা দরকার।
অযথা আতঙ্ক ছড়াবেন না:- ডেঙ্গুজ্বর দেখা দেয়নি এমন এলাকায় যে কোনাে জ্বরকেই ডেঙ্গু ভেবে অযথা আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। শরতে হেমন্তে মশার প্রকোপ খুব বেশি। এসময় আপনারা পরিবারের বা প্রতিবেশীদের কেউ খুব বেশি জ্বরে আক্রান্ত হলে যােগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
এলাকায় ডেঙ্গুজ্বর শুরু হলে সতর্ক থাকবেন। এ সময় বিশেষ করে বাচ্চারা জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হাতের কাছে ডাক্তার না থাকলে রােগীকে নিকটবর্তী হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .