দয়ারাম সাহানি এবং রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য জানা যায়। সিন্ধু নদের তীরে এই সভ্যতা আবিষ্কৃত হয় বলে এর অপর নাম হয় সিন্ধু সভ্যতা।
হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা
হরপ্পা সভ্যতার উন্মেষের যুগে মানুষের লােহার ব্যবহার জানা ছিল না। এসময় থেকেই মূলত পাথরের ব্যবহার কমতে থাকে আর তামার ব্যবহার বাড়তে থাকে। পাথরের বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ও জিনিসপত্রের পাশাপাশি হরপ্পাবাসী তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে ব্রোশ্যের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে শুরু করে।
নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা
মূলত নগরকে কেন্দ্র করেই হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে হরপ্পা সভ্যতার বেশ কিছু শহর আবিষ্কৃত হয়েছে।
নদীমাতৃক সভ্যতা
সমকালীন বিশ্বে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীকে কেন্দ্র করে মেসােপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তেমনি সিন্ধু নদকে কেন্দ্র করে সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
সাক্ষর সভ্যতা
হরপ্পা সভ্যতা ছিল একটি সাক্ষর সভ্যতা। কারণ হরপ্পাবাসীদের প্রায় সকলেই লেখাপড়া জানত। সিন্ধুবাসীরা লিপিবিদ্যা আয়ত্ত করেছিল। সম্প্রতি এস, আর. রাও ৯০০টি সিলমােহর থাকা সিন্ডুলিপির পাঠোদ্ধার করেছেন।
বিস্তৃতি
সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা সিন্ধুতট ছাড়িয়ে পাঞ্জাব, গুজরাট, সৌরাষ্ট্র, রাজপুতানা, বেলুচিস্তান-এর মাকরান (সুংকাজেনদোর) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
রক্ষণশীলতা
সিন্ধু সভ্যতায় সৃষ্টি থেকে বিনাশ পর্যন্ত সময়কালে একই ধরনের জীবনচর্চা, শিল্পচর্চা ও রাষ্ট্রপরিচালনার ইঙ্গিত মেলে, যা এক ধারাবাহিক রক্ষণশীলতার জন্ম দেয়।
কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা
সিন্ধু সভ্যতার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জুড়ে একই ধরনের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পরিমাপ পদ্ধতি ইত্যাদি দেখে পণ্ডিতদের অনুমান, সিন্ধু অঞ্চলে এক শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
মূল্যায়ন
আজ থেকে প্রায় ৮,৫০০ বছর পূর্বে যে সুপ্রাচীন ভারতীয় সিন্ধু সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল তা উৎকর্ষে, মৌলিকত্বে এবং অভিনবত্বে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল ছিল। সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার এইসব বৈশিষ্ট্য পরবর্তীকালে বহু উন্নত সভ্যতার পটভূমি রচনায় সাহায্য করেছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .