ভারতবর্ষের নব্যপ্রস্তর যুগের সভ্যতার প্রধানতম কেন্দ্র ছিল মেহরগড় সভ্যতা। ফরাসি প্রত্নবিদ ফ্রাসােয়া জরিজ-এর নেতৃত্বে পুরাতত্ত্ববিদের একটি দল ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন। পাকিস্তানের কোয়েটা শহর থেকে প্রায় ১৫০ কিলােমিটার দূরে বােলান নদীর কাছে অবস্থিত কাচ্ছি সমভূমিতে মেহেরগড় সভ্যতা অবস্থিত।
মেহেরগড় সভ্যতার গুরুত্ব
ভারতীয় সভ্যতার সূচনা ও বিকাশের ক্ষেত্রে মেহেরগড় সভ্যতা ছিল সূচনাবিন্দু। তাই ভারতের ইতিহাস তথা বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে মেহেরগড় সভ্যতার বিভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে।
পশুচারণ ও কৃষিকাজ
মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্যায়ের উদ্ভব ঘটেছিল আনুমানিক খ্রিঃপূর্ব ৭০০০ – ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এই সময়কালেই মেহেরগড় সভ্যতার মানুষজন পশুচারণকারী ও কৃষিজীবী হয়ে ওঠে। মেহেরগড়ের অধিবাসীরা যব ও দুই প্রকার গম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রত্নক্ষেত্রে প্রাপ্ত পাথরের তৈরি জাঁতা ও শস্য পেষণের উপকরণের ভিত্তিতে কৃষিজীবী সমাজের চরিত্র অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আবাসস্থল সংরক্ষণ
মেহেরগড় সভ্যতার অধিবাসীরা প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষিজীবী হলেও তাদের মাটির বাড়িগুলি ছিল রৌদ্রে শুকানাে কাচা ইট দিয়ে তৈরি। সুতরাং আবাসস্থল নির্মাণে ইটের ব্যবহার ছিল খুব তাৎপর্যপূর্ণ।
কৃষিকাজ সংরক্ষণ
আবাসগৃহের এক কোণে দরজাবিহীন দেয়াল ঘেরা অংশে শস্য সংরক্ষণ করা হতাে। আবার মেহেরগড় সভ্যতার চতুর্থ-পঞ্চম পর্বে দেখা যায় যে বাড়ির এক অংশে থাকত শস্য সংরক্ষণের জন্য বড়াে বড়াে জালা জাতীয় মাটির পাত্র। ভারতের আদিমতম শস্যাগারের অবশেষ মেহেরগড়েই পাওয়া গেছে।
গৃহপালিত পশু
মেহেরগড়ে বন্য বেশ কিছু পশুকে গৃহপালিত পশুর পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছিল। মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা মূলত কৃষির প্রয়ােজনেই পশুকে পােষ মানাতে সচেষ্ট হয়; এ প্রসঙ্গে ছাগল, ভেড়া, জেবু জাতীয় প্রাণীর নাম উল্লেখ করা যায়।
কার্পাস উৎপাদন
মেহেরগড়ের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্পাসের বীজ দগ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ থেকে অনুমান করা হয় যে মেহেরগড়ে কাপাসের চাষ হতাে এবং কার্পাস-তুলা থেকে বস্ত্র উৎপাদন বা কার্পাস-বীজ থেকে তৈল নিষ্কাশন হতো।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .