শানটুং নিয়ে ভার্সাই সন্ধির রায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ১৯১৯ খ্রি. ৪ মের আন্দোলনের গভীর প্রভাব চিনে সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রবাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। ইতিপূর্বে লেনিনের নেতৃত্বে নভেম্বর (১৯১৭ খ্রি.) বিপ্লবের সাফল্য দেখে চিনা বুদ্ধিজীবীরা কার্ল মার্কসের দর্শনের প্রতি আগ্রহী নন। চিনে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলনগুলি মার্কসবাদী ভাবধারার বােধন ঘটায়। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে চিনা কমিউনিস্ট পার্ট।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টি উৎস
চিনা পত্রিকা মিন পাও (Min- Pao) এর দ্বিতীয় সংখ্যায় (১৯০৫ খ্রি.) কার্ল মার্কস এর জীবনী প্রকাশিত হলে, চিনা বুদ্ধিজীবী গােষ্টী প্রথম মার্কসবাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ পায়। এজন ডিউই, রাট্রান্ড রাসেলের মতাে স্বনামধন্য দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীদের চিন ভ্রমন চিনা বুদ্ধিজীবী মহলে মার্কসবাদের চর্চার প্রসার ঘটায়। পরবর্তী সময়ে তিয়েন পাও (Tien -Pao) পত্রিকায় ফ্রেডারিক এঙ্গেসের ইনট্রোডাকসন টু দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-র অনুবাদ প্রকাইশত (১৯০৮ খ্রি.) হলে, কতিপয় বুদ্ধিজীবী তা পাঠ করে প্রভাবিত হন, যারা পরবর্তীকালে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নেন।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টি গঠন
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী গােষ্ঠীর অসামান্য প্রচেষ্টায় সাংহাই প্রদেশের ফরাসি অধিকৃত এক গার্লস স্কুলে গােপনে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (Chinese Communist Party, CCP) গড়ে উঠেছিল (১৯২১ খ্রি. ১ জুলাই)। সমাজতন্ত্রবাদ তথা মার্কসীয় দর্শনের আধার রূপে প্রতিষ্ঠিত হয় এই চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। পিকিং, চাংসা, ব্যান্টন প্রভৃতি জায়গায় এই কমিউনিস্ট পার্টির শাখা গড়ে ওঠে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন চেন-তু-শিউ।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠাতা
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাও জে দঙু, লিও শাও-চি, চৌ-এন-লাই, চু-তে প্রমুখ। চিনে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় মােট ১২ জন বুদ্ধিজীবীর অবদান ছিল। মার্কসবাদ জনপ্রিয় করার কাজে সবথেকে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন অধ্যাপক চেন-তু-শিউ এবং অধ্যাপক লি-তাও-চাও। প্রতিষ্ঠা পর্বে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির মােট সদস্য সংখ্যা ছিল ১২৩ জন।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের উদ্দেশ্য
মাও জে দ এবং আরও ১১ জন বুদ্ধিজীবী সাংহাইতে এক সম্মেলনে মিলিত হন (১৯২১ খ্রি. ১ জুলাই)। যা ছিল চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সম্মেলন। চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা সাতটি ছােটো কমিউনিস্ট ‘সেল’ এর ১২ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যােগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশ্য রূপে ঘােষণা করা হয় –
(1) চিনে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটানাের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে।
(2) চিনে রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি পালন করা হবে।
(3) সমরনায়কদের ও সমরতন্ত্রের অবলুপ্তি ঘটানাে হবে।
উপসংহার
চিনের কমিউনিস্ট নেতারা প্রথমে কৃষকদের উপেক্ষা করে মূলত শ্রমিকশ্রেণির সাহায্যেই বৈপ্লবিক সংগ্রাম পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মাও-জেদ চিনা কমিউনিস্ট পার্টির বৈপ্লবিক সংগ্রামের সঙ্গে কৃষকশ্রেণিকে যুক্ত করার প্রয়াস নিলে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ হয়। জাঁ শ্যেনাে বলেছন – চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ছিল ৪ মে আন্দোলনের উত্তরাধিকারী (The Chinese Communist Party was heir to the May Fouth Move- Iment).
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .