খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতের ইতিহাসে ধর্মীয় ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছিল প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন। এই সময়ের সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য দু’টি ধর্ম ছিল বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ।
বৌদ্ধ ধর্মমত
গৌতম বুদ্ধ সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে অনুসরণীয় ধর্মাচরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার ধর্মমতের বিভিন্ন দিক হলাে –
1. ঈশ্বরের অনুল্লেখ
বুদ্ধদেব ঈশ্বর ও আত্মার স্বরূপ কিছুই আলােচনা করেননি, দেব-দেবী সম্বন্ধেও কোনাে উল্লেখ করেননি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধেই তিনি নীরব থেকে গেছেন।
2. মুক্তির পথ
বুদ্ধদেবের মতে মানুষের দুঃখ-কষ্টের মূল কারণ হলাে অজ্ঞতা ও আসক্তি। অজ্ঞতা বা জ্ঞানের অভাবহেতু এবং পার্থিব বস্তুর ওপর আসক্তির ফলে মানুষের পুনর্জন্মেও দুঃখকষ্টের শেষ হয় না।
3. কর্মবাদ ও পুনর্জন্ম
বুদ্ধদেব হিন্দুদের মতাে কর্মবাদ ও পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন। মানুষ নিজ কর্মফল অনুসারে বারবার জন্ম লাভ করে এবং কৃতকর্মের ফল ভােগ করে। সুতরাং ‘নির্বাণলাভ’ বা পুনর্জন্ম থেকে নিষ্কৃতি লাভই মানুষের প্রধান এবং চরম উদ্দেশ্য হওয়া প্রয়ােজন। সৎকর্মের দ্বারা জ্ঞান অর্জন করে আত্মার উন্নতিসাধন করলেই এই নির্বাণ লাভ সম্ভব।
4. অষ্টাঙ্গিক মার্গ
তৃষার অবসান এবং আত্মার উন্নতি সাধনের জন্য বুদ্ধদেব ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গের নির্দেশ দিয়েছেন, যথা – সৎ সংকল্প, সৎ বাক্য, সৎ কর্ম, সৎ চেষ্টা, সং স্মৃতি, সম্যক দৃষ্টি, সৎ জীবন ও সম্যক সমাধি।
5. নৈতিক উপদেশ
এছাড়া তিনি আরও কতকগুলি নৈতিক উপদেশ দিয়েছেন, সেগুলি তার ধর্মের অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমন— হিংসা ত্যাগ করা, চুরি না করা, মিথ্যা না বলা, অর্থলিপ্সা ত্যাগ করা প্রভৃতি। বুদ্ধদেব বেদের অপৌরুষেয়তায় বিশ্বাস করতেন না, ব্রাক্ষ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতেন না এবং শ্রেণিভেদ মানতেন না।।
পর্যালােচনা
বুদ্ধদেব তার ধর্মকে বহুল পরিমাণে বাস্তববাদী করে তুলেছিলেন এবং নির্বাণলাভের জন্য একটি মধ্যপন্থা প্রদর্শন করেছিলেন।
মধ্যপন্থা
হিন্দুদের জটিল যাগযজ্ঞ ও উৎসব অনুষ্ঠানের ভারাক্রান্ত পথকে তিনি অস্বীকার করেন এবং জৈনদের কঠোর কৃচ্ছসাধন ও আত্মপীড়নেও তিনি বিশ্বাস করতেন না। ভােগ ও কুড্ডসাধনের মাঝামাঝি নির্দিষ্ট তার অষ্টাঙ্গিক মার্গের পথ তাই এত জনসমর্থন পেয়েছিল।
নতুন ধর্ম নয়
মূলত বৌদ্ধ ধর্ম কোনাে নতুন ধর্ম নয়; বরং এক পবিত্র জীবনধারণের প্রতি নির্দেশ মাত্র। জাতক নামক গ্রন্থে বুদ্ধদেব নিজেই মত প্রকাশ করেছেন যে ধর্ম বলতে কতকগুলি প্রার্থনা, স্তোত্র বা আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকাণ্ড বােঝায় না, এটা পবিত্র জীবনযাপন ও জীবের মুক্তি বােঝায়।
Comments ( 1 )
কথাগুলো জানতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
You are welcome. We wish you all the best