দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অব-উপনিবেশীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তীব্র সংগ্রামের শেষে এসব উপনিবেশ বিদেশি শাসন হতে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় অর্থাৎ উপনিবেশগুলিতে অব-উপনিবেশীকরণ বা উপনিবেশবাদের অবসান ঘটতে শুরু করে। এই ঘটনার অর্থনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য অপরিসীম।
অব-উপনিবেশীকরণের অর্থনেতিক তাৎপর্য
অর্থনৈতিক দুর্বলতা
স্বাধীনতা লাভের আগে ঔপনিবেশিক শক্তির দখলে থাকা উপনিবেশগুলির অর্থ ও সম্পদ ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দখলে। ক্রমাগত শােষণের ফলে এরা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ফলে অব-উপনিবেশীকরণের পরও অর্থের অভাবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
নয়া উপনিবেশবাদ
সদ্য স্বাধীন দেশগুলির দুর্বলতার সুযােগে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলি অর্থনৈতিক সহায়তা দান করে এসব দেশে প্রতিপত্তি বিস্তার করে। ফলে রাজনৈতিকভাবে অধীনতা থেকে মুক্ত হলেও, এই দেশগুলি বৃহৎ শক্তির অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদের কোপে পড়ে।
আঞ্চলিক সহযােগিতা বৃদ্ধি
সদ্য স্বাধীন উপনিবেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক সহযােগিতা বেড়ে যায়। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে এই দেশগুলি বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে তােলে। এসব সংগঠন মূলত অর্থনৈতিক সহযােগিতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়। কয়েকটি সংগঠন হলাে— SAARC, ASEAN.
অব-উপনিবেশীকরণের সামাজিক তাৎপর্য
বর্ণবৈষম্যবাদের অবসান
শিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন উপনিবেশে কৃয়াঙ্গরা এতদিন শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা শােষিত হচ্ছিল। অব-উপনিবেশীকরণের পর সারা পৃথিবীতে বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, রােডেশিয়া থেকে বিদায় নেয় বর্ণবৈষম্যবাদ।
এলিট গােষ্ঠীর শক্তি বৃদ্ধি
ঔপনিবেশিক শক্তির অবসানের পর সদ্য স্বাধীন দেশগুলির শাসনক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় শিক্ষিত ও ধনী এলিট গােষ্ঠীর হাতে। আন্দোলনকারী দরিদ্র মানুষ ক্ষমতালাভে ব্যর্থ হয়। ফলে এলিটভুক্তদের সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সামগ্রিক বিভাজন দেখা দেয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .