সুদীর্ঘ ৩০ বছর ধরে চিনের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ফলশ্রুতি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, যা চিনের একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনে ৪মে (১৯৪৯) আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছিল তার ফলেই ১৯৪৯-এ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
চিনা কমিউনিস্ট দলের উদ্দেশ্য
চিনা কমিউনিস্ট দলের উদ্দেশ্য ছিল—
(১) চিনে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের অবসান। (২) চিনের রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা এবং
(৩) চিনা সমরনায়কদের (war lords) বিলােপ সাধন।
কমিউনিস্ট ও কুয়ােমিনটাং প্রতিদ্বন্দ্বিতা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের পর চিনে কমিউনিস্ট ও কুয়ােমিনটাং দলের মধ্যেকার যুদ্ধকালীন সমঝােতা নষ্ট হয়। কুয়ােমিনটাং দল ও চিনা কমিউনিস্ট বাহিনীর মধ্যে জাপান অধিকৃত চিনের ভূখণ্ড দখল করা ও ফেলে যাওয়া বিপুল সমরাস্ত্র লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যচিনের ১৮টি যুক্তাঞ্জলের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকায় কমিউনিস্টরাই এই দ্বন্দ্বে এগিয়ে যায়।
লং মার্চ
মাঙ-জে-দঙের নেতৃত্বে চিনা কমিউনিস্টরা দক্ষিণ-পূর্ব চিনের ‘কিয়াং-শি’ প্রদেশ থেকে উত্তরে ‘শেন-সি’ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয়। এই পদ্যাত্ৰা ইতিহাসে লং মার্চ (১৯৩৪ খ্রিঃ) নামে পরিচিত।
পদযাত্রার বর্ণনা
৩৭০ দিন ধরে (১৯৩৪ খ্রিঃ ১৬ অক্টোবর ১৯৩৫ খ্রিঃ ২০ অক্টোবর) পায়ে হেঁটে সুদীর্ঘ ২৫০০ কিমি পথ অতিক্রম করে পদযাত্রীরা ‘শেন-সি’ প্রদেশে পৌঁছায়। সরকারি সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে করতে তারা পায়ে হেঁটে অগ্রসর হয়। তবে এক লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ৮ হাজার জন শেষ পর্যন্ত জীবিত ছিল।
লং মার্চের গুরুত্ব
লং মার্চ নানা কারণে চিনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ।
১) এই দীর্ঘ পদযাত্রা চলাকালীন কমিউনিস্ট নেতারা চিনের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ ও জাতিগােষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ পেয়েছিলেন।
২) কষ্টকর দীর্ঘ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে চিনা কমিউনিস্টরা কষ্ট সহিষ্ণুতার শিক্ষা পেয়েছিল।
৩) এই দীর্ঘ পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে চিনের মাটিতে লালফৌজের অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রকাশিত হয়েছিল।
চিনা প্রজাতন্ত্র গঠন
চিনের মূল ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ হয়ে চিয়াং কাইশেক ফরমােজা দ্বীপে আশ্রয় নেন। আর চিনের মূল ভূখণ্ডে মাও-জে-দ-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী চিন। প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন মাও-জেদ এবং প্রধানমন্ত্রী হন চৌ-এন-লাই।
কমিউনিস্টদের সাফল্যের কারণ
মাও-জে-দঙ-এর সাফল্যের কারণ হলাে
(১) কুয়ােমিং তাং সরকারের দুর্নীতি ও অযােগ্যতা।
(২) চীয়াং-কই-শেক শিল্পের বিশেষ উন্নতি ঘটাতে পারেননি এবং বস্ত্রশিল্পে শিশুশ্রমিক বন্ধের ব্যবস্থা নেননি।
(৩) কৃষকদের দারিদ্র্য দূরীকরণে কুয়ােমিং তাং সরকার কোনাে ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া কমিউনিস্ট সেনাপ্রধান লিন বিয়াও, চৌ তেই (Chu Teh) চী-এন-এন (ch-en-yi) ই প্রমুখ কুয়ােমিং তাদের চেয়ে অনেক দক্ষ ও দূরদর্শী ছিলেন।
উপসংহার
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মাও-জে-দ-এর নেতৃত্বে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয়শক্তি হিসেবে নয়া চিনের অভ্যুদয় আধুনিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .