স্বরাজ্য দলের কর্মসূচী
১৯২৩ খ্রীঃ মার্চ মাসে এলাহাবাদে পন্ডিত মতিলাল নেহেরুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাজ্য দলের প্রথম অধিবেশনে দলের গঠনতন্ত্র ও আন্দোলনের কর্মসূচী রচিত হয়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এই দলকে “A Part within the congress and as such as integral part of the congress” বলে অভিহিত করেন। ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন করাই ছিল এই দলের মূল লক্ষ্য। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল-
আইনসভায় প্রবেশ করে ভেতর থেকে সুসংবদ্ধ, নিয়মিত ও নিরন্তর বাধা সৃষ্টি করে সরকারকে অকেজো করে দেওয়া।
* সরকারী বাজেট প্রত্যাখ্যান করা।
* নানাবিধ বিল ও প্রস্তাব উত্থাপন করে জাতীয়তাবাদের অগ্রগতিতে সাহায্য করা।
* সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতি-গ্রহণ করে বিদেশী শােষণ বন্ধ করা। নতুন দলের মতাদর্শ ও কর্মসূচী প্রচারের উদ্দেশ্যে সুভাষচন্দ্র সম্পাদিত বাংলার কথা’ এ. আয়েঙ্গারের ‘স্বদেশমিত্রম’ এবং এন.সি কেলকারের ‘কেশরী’ পত্রিকা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে।
নির্বাচনে সাফল্য
১৯২৩ খ্রীঃ নভেম্বর মাসে ভারতশাসন আইন (১৯১৯) অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে স্বরাজ্য দল ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে ১০১টি আসনের মধ্যে ৪৫টি আসনে জয়লাভ করে। এই দলের মতিলাল নেহেরু বিরােধী দলনেতার পদ লাভ করেন। ১৯২৫ সালের মার্চ মাসে বিঠলভাই প্যাটেল কেন্দ্রীয় আইনসভার স্পীকার নির্বাচিত হন। এছাড়া বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসন মূলক সংস্থাগুলির নির্বাচনেও স্বরাজ্য দল ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে সাফল্য লাভ করে চিত্তরঞ্জন দাশ মেয়র, সুরাবর্দি ডেপুটি মেয়র এবং সুভাষচন্দ্র বসু এক্সিকিউটিভ অফিসার নিযুক্ত হন।
স্বরাজ্য দলের কার্যকলাপ
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে স্বরাজ্য দল সরকারী নীতি ও কার্যকলাপে বাধা দানের নীতি গ্রহণ করে। ১৯২৪ খ্রীঃ ফেব্রুয়ারীতে স্বরাজ্য দল ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আইনসভায় একটি প্রস্তাব পাশ করতে সক্ষম হয়। ভারতের সংবিধান তৈরীর প্রস্তাবও গৃহীত হয়। এই দলের বিরােধিতার ফলে সরকার পর পর তিন বছর কেন্দ্রীয় আইনসভার বাজেট ও অর্থবিল পাশ করতে ব্যর্থ হয় এবং গভর্ণর জেনারেলের ‘বিশেষ ক্ষমতা তা মঞ্জুর করতে বাধ্য হয়। এই দল সরকারের কাছে বন্দীমুক্তি, দমনমূলক আইন প্রত্যাহার, শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি, ভারতীয় শিল্পের সংরক্ষণ, রেল ভাড়া ও লবণ শুল্ক হ্রাস এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্ব শাসন প্রবর্তণের দাবি পেশ করে। এছাড়া স্বরাজ্য দল সরকারি অনুষ্ঠান ও অভ্যর্থনা সভা বর্জন এবং সরকারি নীতির প্রতিবাদে মাঝে মাঝেই আইনসভার কক্ষ ত্যাগ করার নজির সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রাদেশিক আইন সভাগুলিতেও বিশেষতঃ বাংলায় চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে স্বরাজ্য দল সক্রিয় বিরােধিতার নীতি গ্রহণ করে। এছাড়া, হিন্দু মুসলীম ঐক্যের উদ্দেশ্যে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ গড়ে তােলেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .