তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহ
স্বাধীনতা লাভের প্রাক্মুহূর্তে বৃহত্তম কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয় তেলেঙ্গনায়। এই আন্দোলনকে গেরিলা কৃষক যুদ্ধ বলাই সমিচীন। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল প্রায় ত্রিশ লক্ষ কৃষক। এর ব্যপ্তি ছিল ষােলাে হাজার বর্গমাইল জুড়ে। এর স্থায়িত্ব ছিল ১৯৪৬-৫১ খ্রিঃ পর্যন্ত। হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষকদের ওপর সামন্ততান্ত্রিক শােষণ ছিল এই বিদ্রোহের সবচেয়ে বড় কারণ।
তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের কারণ
উর্দুভাষী মুসলমান ও উচ্চবর্ণীয় হিন্দু দেশমুখ নামক ভূস্বামীদের আর্থিক ও সামাজিক পীড়ন কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। নিম্নবর্ণভূক্ত কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক বেগার শ্রম আদায় করা এবং ঋণের জালে জড়িয়ে দাসে পরিণত করা ছিল এই রাজ্যের প্রচলিত রীতি। তেলেগু, কন্নড়, মারাঠি, ভাষাভাষি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু অধুষিত এই অঞলে ধর্মীয় ও ভাষাগত বিরােধ ও অর্থনৈতিক ক্ষোভের সাথে যুক্ত হয়ে এক বিস্ফোরক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। এঁদের উপর অল্পসংখ্যক উর্দুভাষী মুসলমান সামন্তর কর্তৃত্ব শেষ পর্যন্ত অসহানীয় মনে হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে নিজাম সরকার ও ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাকে অভূতপূর্ব সাড়া পায় কমিউনিস্টরা। কংগ্রেস নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করে এই আন্দোলনে।
তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের প্রকার
তেলেঙ্গানা বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটেছিল ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ৪ঠা জুলাই নালগােন্ডার জলগাঁও গ্রাম। ঐ দিন ডােড়ি বােমারইয়া নামে এক কমিউনিষ্ট কর্মী এক দরিদ্র কৃষকের জমি জমিদার রামচন্দ্র রেড্ডির গ্রাস থেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বরঙ্গল ও খাম্মাম জেলায়। অন্ত্ৰ মহাসভা ও কমিউনিস্ট পার্টি একজোট হয়ে নিজামের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে। তারা জমিতে বেগার খাটা, বেআইনি খাজনা, জমি থেকে উচ্ছেদ এবং পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানায়। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে হায়দ্রাবাদের ৩০ লক্ষ দরিদ্র কৃষক আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে তারা গেরিলা কায়দায় লড়াই চালিয়ে বহু গ্রাম দখল করে
তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের ব্যর্থতা
১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দের শেষ দিকে অন্তর্নিহিত দুর্বলতার জন্য আন্দোলনের তীব্রতার হ্রাস পায়। ধনী কৃষকরা এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়। ১৯৫০ খ্রিঃ ২৬ শে জানুয়ারী হায়দ্রাবাদ অনুষ্ঠানিকভাবে ভারতভূক্ত হলে তেলেঙ্গানা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় (১৯৫০)
পরিশেষে বলা যায় এই আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। ডঃ সুমিত সরকারের মতে, “প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে তেলেঙ্গানা সংগ্রামের ইতিবাচক সাফল্য তুচ্ছ করার মতাে ছিল না।”
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .