জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী অনেক আশা নিয়ে তাঁর অহিংস সত্যাগ্রহ আদর্শের মাধ্যমে অসহযােগ আন্দোলনের সূচনা ঘটালেও শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন অহিংস থাকেনি। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ফেব্রুয়ারী উত্তরপ্রদেশের গােরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে প্রায় তিন হাজার কৃষক জনতার এক শােভাযাত্রার ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। উত্তেজিত জনতা তাদের আক্রমণ করলে তারা থানায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এবার উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নিসংযােগ করে ২২ জন পুলিশকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করে। এই ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে শান্তির পূজারী গান্ধীজী অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। তাঁর মতে চৌরিচৌরার ঘটনা তার কাছে ছিল “Bitterest humiliation,
গান্ধীজীর আন্দোলন বন্ধের আকস্মিক সিদ্ধান্তে সমগ্র দেশবাসী হতাশা ও ক্ষোভে মর্মাহত হয়ে পড়ে। চিত্তরঞ্জন দাশ বলেন যে “সারা জীবনের মতাে সুযােগ হাতছাড়া হল”। সুভাষচন্দ্র বসু এই ঘটনাকে ‘National calamity’ বলে আখ্যায়িত করেন। লালা লাজপত রায় বলেন যে, “We were simply routed”. মতিলাল নেহেরু বলেন যে, “একটি স্থানের একটি জনতার পাপের জন্য গান্ধীজী গােটা দেশবাসীকে শাস্তি দিলেন।” মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্ত মনে করেন যে, বিত্তশালীদের স্বার্থ বিনষ্ট হতে দেখে গান্ধীজী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
এত সমালােচনা সত্ত্বেও বলতে হয় যে, গান্ধীজীর এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলা যায় না।
প্রথমতঃ এই আন্দোলন ছিল সহিংসা এবং এতে হিংসার প্রবেশ সম্পূর্ণ নীতিবিরােধী ছিল। তিনি তাই এই আন্দোলন হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠলে প্রত্যাহার করে নেন।
দ্বিতীয়তঃ গান্ধীজী উপলব্ধি করেন যে, নিরস্ত্র দেশবাসী হিংসার পথে অগ্রসর হলে শক্তিশালী ব্রিটিশ সরকার অত্যাচার শুরু করবে এবং তাতে রক্তক্ষয় হবে। তাই তিনি এই আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।
তৃতীয়তঃ গান্ধীজী বুঝতে পারেন যে, আন্দোলনকে আর বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হন। মধ্যবিত্ত ও বিভিন্ন পেশার মানুষরা জীবিকা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় অধৈর্য হয়ে পড়েন।
চতুর্থতঃ আন্দোলনে ভাটার টান পড়ছিল। একবছর ধরে আন্দোলন চলছিল অথচ সরকার আপােসের কোন ইচ্ছাই দেখায়নি। আন্দোলনের আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হতে হত বা পিছু হটলে ব্যাপারটা ভালাে দেখাত না। এই অবস্থায় চৌরিচৌরার ঘটনা সসম্মানে পিছু হটার সুযােগ করে দেয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .