ভারতের ইতিহাসে ১৯১৯-১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় গান্ধিযুগ নামে পরিচিত কারণ মুলত তাঁর নেতৃত্বেই এই সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। সর্বভারতীয় নেতারূপে প্রতিষ্ঠার পুর্বে মহাত্মা গান্ধি বিহারের চম্পারণ ও খেদার কৃষক। আন্দোলন এবং আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। তিনটি ক্ষেত্রেই তিনি সাফল্য লাভ করেছিলেন।
চম্পারণ, খেদা ও আমেদাবাদ আন্দোলনের গুরুত্ব
এই তিনটি আন্দোলনের গুরুত্বগুলি হলাে –
গান্ধিজির উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ
চম্পারণ সত্যাগ্রহ ছিল গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রথম উল্লেখযােগ্য সাফল্য। চম্পারণ সত্যাগ্রহ হলাে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গান্ধিজির উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ’ একথা বলেছেন রমেশচন্দ্র মজুমদার।
জাতীয় আন্দোলনের পরিধি বিস্তার
ডঃ জুডিথব্রাউনের মতে এই আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষক সমাজের সঙ্গে গান্ধিজির প্রথম যােগসূত্র স্থাপিত হয়। ইতিপূর্বে ভারতের জাতীয় আন্দোলন শহুরে মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু গান্ধিজি এই সীমাবদ্ধতা দূর করে জাতীয় আন্দোলনের পরিধি বিস্তার করে।
অনশনঃ রাজনৈতিক হাতিয়ার
আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলনেই মহাত্মা গান্ধি ভারতে প্রথম রাজনৈতিক হাতিয়াররূপে অনশনকে ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে জাতীয় রাজনীতিতে অনশনের প্রয়ােগ ছিল এরই উত্তরসূরি।
গান্ধিজির দক্ষতা
জুডিথ ব্রাউন-এর মতে যদিও গান্ধিজি তখন পর্যন্ত কোনাে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবুও খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলন তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলন করার দক্ষতা প্রমাণ করে।
জাতীয় সংগ্রামের চরিত্রে রূপান্তর
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলন ভারতীয় মুক্তি সংগ্রামে এক নতুন পথের সন্ধান দেয় এবং জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে তৃতীয় পর্বের সূচনা করে। এই আন্দোলন একটি আলিক আন্দোলন হলেও, এই আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের চরিত্রের রূপান্তর ঘটায়— শান্ত, নিরীহ গ্রামবাসীরা আত্মবিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে সত্যাগ্রহ ও
গণ-আন্দোলনের পথ ধরে।
গান্ধিজির অনুভূতি
“এই আন্দোলনগুলি গান্ধিজিকেভারতের দীনদরিদ্র জনতার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে নিয়ে আসে, যাদের দুঃখ লাঘবের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেন” – বিধান চন্দ্র। কালক্রমে গান্ধিজি দরিদ্র, জাতীয়তাবাদী ও বিদ্রোহী ভারতের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .