আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের তাৎপর্য
১৯১৫ খ্রিঃ জানুয়ারীতে গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। ভারতে পদার্পণ করেই কোন রাজনৈতিক সংগঠনে তিনি যােগদান করেননি। তবে বেশী দিন রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকাও তাঁর পক্ষে বেশিদিন সম্ভব হয়নি। ১৯১৭-১৮ খ্রিঃ তিনি বিহারের চম্পারণ এবং গুজরাটের আমেদাবাদ ও খেদা অণ্ডলের শােষিত কৃষক-শ্রমিকদের নিয়ে তিনি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ঝাঁপ দেন।
চম্পারণের সত্যাগ্রহ সফলতার পর গান্ধীজী আমেদাবাদের সূতাকল শ্রমিকদের স্বার্থে তাঁর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সফল প্রয়ােগ ঘটান। মিল মালিকরা ‘প্লেগ বেনেছে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে বােনাস চালু রাখার দাবিতে শ্রমিকরা সােচ্চার হয়। প্রতিবাদে মালিকরা মিল বন্ধ করে দেয়। ১৬ দিন পর মিল খুললে শ্রমিকরা ৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট শুরুকরে(১৯১৮ খ্রিঃ)। উভয়পক্ষই গান্ধীজীর পরামর্শ ও সহযােগিতা প্রার্থনা করে। গান্ধীজী শ্রমিকদের ৩৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিকে ন্যায়সংগত আখ্যা দেন এবং বিষয়টি মীমাংসার জন্য সালিশী বাের্ডের কাছে পাঠানাের পরামর্শ দেন। কিন্তু মালিকরা ২০ শতাংশ বােনাসের দাবিতে অনড় থাকলে গান্ধীজী শ্রমিকদের ধর্মঘটের পরামর্শ দেন। দৈনিক সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে এবং শ্রমিক সমাবেশে ভাষণ দিয়ে তিনি ধর্মঘটীদের মনােবল অটুট রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই শ্রমিকদের মনােবলে ভাঙন দেখা দিলে তিনি নিজেই আমরণ অনশনে বসেন। শেষ পর্যন্ত মালিকরা ৩৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির বৃদ্ধির দাবি মেনে নেয়।
গান্ধীজীর ব্যক্তিগত জীবনও ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই শ্রমিক ধর্মঘটের গুরুত্ব অসীম।
প্রথমত, শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গান্ধীজী শ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং এইভাবে শহরাঞ্চলে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে ওঠে।
দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলনেই গান্ধীজী প্রথম অনশনকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করেন। পরবর্তীকালে অনশন একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়।
তৃতীয়ত, শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কেবলমাত্র শ্রমিকদেরই নয়, তিনি মালিকপক্ষেরও সহানুভূতি, বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .