রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চায় নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় নীতিমান বাচক দৃষ্টিভঙ্গিটিকেই ঐতিহ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয় । আধ্যাপক বল-ঐতিহ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বলতে বা নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে সেই সব দৃষ্টিকোণ বুঝিয়েছেন যেগুলি ১৯০০ খ্রীঃ-এর আগে রাজনৈতিক আলােচনার জগতে প্রভাবশালী ছিল। ঐগুলি হল দর্শন, ইতিহাস এবং আইনকেন্দ্রীক আলােচনা। সুতরাং দর্শন, ইতিহাস ও আইনের প্রাধান্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি হল নীতিমান বাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
অধ্যাপক বলের অভিমত অনুসারে, এই নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গি উনবিংশ শতক পর্যন্ত প্রাধান্যকারী দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।নীতিমান বাচক দৃষ্টিভঙ্গি হল আদর্শমুখী। এই দৃষ্টিভঙ্গির আলােচনায় ভালমন্দের বিচার বিশেষ স্থান লাভ করে। বিষয়বস্তুর নৈতিক দিকের উপর দৃষ্টিনিবন্ধ রাখার ফলে এধরণের আলােচনা বহুলাংশে দর্শনকেন্দ্রীক। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই আলােচনা পদ্ধতিতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ও ঘটনাবলীর ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের প্রবণতা দেখা যায়। এইসব আলােচনা সংবিধান ও আইনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য, আনুগত্য প্রভৃতি চিরায়ত রাজনৈতিক ধারণা সমূহ নীতিমানবাচক বিশ্লেষণ ধারায় প্রাধান্য লাভ করে।
উপরােক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নীতিমান বাচক দৃষ্টিভঙ্গির কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এগুলি হল—
ক) নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অনুপ্রেরণার উৎস হল দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও আইনগত আলােচনা।
খ) নীতিমানবাচক আলােচনা ধারায় রাজনৈতিক বিষয়াদি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় নৈতিকমান, আদর্শ ও মূল্যবােধকে অনুসরণ করে।
গ) এই দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক বিষয়াদি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সরকারী প্রতিষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিক কাঠামাে গ্রহণ করা হয়।
ঘ) এধরনের রাজনৈতিক আলােচনায়, রাজনৈতিক সমস্যা ও সংস্কার প্রসঙ্গে বাস্থিত উপায় নির্দেশের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।
ঙ) নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গতানুগতিক রাজনৈতিক মতবাদ ও ধ্যানধারণার প্রতি আনুগত্য দেখা যায়।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল্যবােধহীন আলােচনার সূত্রপাত ঘটালেও নয়া-আচরণবাদে নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব উপেক্ষিত হয়নি। মানব সমাজে বৈজ্ঞানিক কৃৎকৌশলের পাশাপাশি মূল্যবােধের গুরুত্ব আছে। উন্নত রাষ্ট্র ও মানব সমাজ গড়ে তােলার জন্য নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
Comment ( 1 )