মহারাণীর ঘােষণাপত্র
১৮৫৭ খ্রিঃ বিদ্রোহ দমন করার পর ভারতে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার প্রভূত পরিবর্তন করা হয়। মহারানি ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিরূপেলর্ড ক্যানিং এলাহাবাদ অনুষ্ঠিত এক দরবারে যে ঘােষণাপত্র পাঠ করেন (১৮৫৮ খ্রিঃ ১ নভেম্বর) তা মহারানির ঘােষণাপত্র নামে পরিচিত।
মহারাণীর ঘােষণাপত্রের সুপারিশসমূহ
মহারানির ঘােষণাপত্রে বলা হয়—
১) কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের অধীনে আনা হয়েছে। এখন থেকে গভর্ণর জেনারেল ভাইসরয় হিসাবে পরিচিত হবেন।
২) স্বত্ববিলােপ নীতি বাতিল হবে এবং দেশীয় রাজন্যবর্গের দত্তক গ্রহণের
অধিকার থাকবে।
9) নতুন কোনাে রাজ্য দখল কিংবা দেশীয় রাজ্যগুলির আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে
সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।
৪) কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির চুক্তি ও সন্ধি মেনে চলা হবে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে যােগ্যতাসম্পন্ন ভারতীয়দের সরকারি চাকরিতে নিয়ােগ করা হবে।
৬) প্রতিটি ভারতবাসীর ধর্মীয় স্বাধীনতা মেনে নেওয়া হবে।
মহারাণীর ঘােষণাপত্রের গুরুত্ব
ইংল্যাণ্ডের দৃষ্টিভঙ্গীতে এটি ভারতের ম্যাগকার্টা হিসাবে বিবেচিত হয়। এর গুরুত্ব অসীম
১) মহারাণীর ঘােষণাপত্র মারফত ভারতে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার নতুন নীতি ও আদর্শের কথা ঘােষণা করা হয়।
২) এই ঘােষণাপত্র দ্বারা মূলত দেশীয় রাজন্যবর্গ তথা ভারতীয় সমাজকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিল।
৩) আবার অন্যদিকে মহারানির ঘােষণাপত্র দ্বারা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত তৈরী করা গিয়েছিল। কারণ এই ঘােষণাই ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ভারত-শাসন। আইনের পূর্ব পর্যন্ত এদেশে প্রায় ৬০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি রচনা করেছিল।
মূল্যায়ন
ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির দীর্ঘ ১০০ বছরের অপশাসনের ক্ষতে প্রলেপ দিতে ভিক্টোরিয়া তার ঘােষণাপত্রে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে মহারানির ঘােষণাপত্রে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতিগুলি সরকার পরবর্তীকালে বাস্তবায়িত করেনি, সেগুলি ঘােষণাপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাই ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে “The period of administration by the crown was thus a period of broken pledges.” আর ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্র মহারানির ঘােষণাপত্রকে “Political Bluff” বলে উল্লেখ করেছেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .