ভারতবর্ষেইংরেজ শাসনের ইতিহাসে লর্ড ডালহৌসি একটি অবস্মরণীয় স্থান অধিকার করে আছেন। ১৮৪৮ থেকে ১৮৫৬ খ্রিঃ পর্যন্ত তাঁর শাসনকাল নানা কারণে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য অধ্যায়। ভালহোসির অন্যতম প্রধান কর্তি ভারতবর্ষে ইংরেজদের ক্ষমতার সম্প্রসারণ।তাইস্যার রিচার্ড টেম্পলে ডালহৌসিকে ভারতে আগত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী গভর্ণর জেনারেলদের মধ্যে সর্বাধিক অগ্রণী বলে অভিহিত করেছেন। তার সম্প্রসারণ নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যজয় ও ইংরেজদের ক্ষমতা বিস্তার। সেই কারণে ডালহৌসিকে ঘােরতর সাম্রাজ্যবাদী হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
স্বত্ববিলােপনীতি
ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে ডালহৌসির অভিনব অস্ত্র ছিল স্বত্ববিলােপ নীতি। তবে তিনি এই নীতির উদ্ভাবক ছিলেন না। ১৮৩৪ খ্রিঃ কোম্পানীর পরিচালকবর্গ এরূপ নীতি প্রবর্তনের কথা বলেছিলেন। ১৮৪০ খ্রিঃ কোলবা রাজ্যের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রথম চালু হয়। তবে একথা সত্য যে ডালহৌসি এই নীতির ব্যাপক প্রযােগ দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছিলেন। এই নীতির মূল কথা ছিল কোম্পানী সৃষ্ট কোন দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজার দত্তক পুত্রের আইনগত কোনাে বৈধতা থাকবে না এবং ঐ রাজ্য কোম্পানীর শাসনাধীন চলে আসবে।
স্বত্ববিলােপনীতি প্রয়ােগ
এই নীতি প্রয়ােগ করে ডালহৌসি বহু রাজ্য কোম্পানীর অধীনস্থ করেন। এই আইন প্রয়ােগ করে তারা (১৮৪৮ খ্রিঃ), সম্বলপুর (১৮৫০ খ্রিঃ), ঝাসী (১৮৫৫), উদয়পুর (১৮৫৬খ্রিঃ) প্রভৃতি রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়। এই নীতি প্রয়ােগ করে ডালহৌসি রাজপরিবারের ভাতা বন্ধ করে দেন। কর্ণাটের নবাবের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারীকে ভাতা থেকে বঞ্চিত করেন। এই নীতি প্রয়ােগের ফলে পেশােয়া দ্বিতীয় বাজীরাও এর দত্তক পুত্র নানা সাহেব ৮ লক্ষ টাকার বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হন। ডালহৌসির ইচ্ছা ছিল দিল্লির মুঘল সম্রাটেরও উপাধি কেড়ে নেওয়া। কিন্তু ডাইরেক্টরীর সম্মতি না পাওয়ায় তিনি বিরত হন।
পরিশেষে বলা যায় ডালহৌসির স্বত্ববিলােপনীতির প্রয়ােগ দেশীয় রাজন্যবর্গের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। অধিকৃত রাজ্যসমূহের সৈনিক ও কর্মচারীরা চাকুরিচ্যুত হয়ে বিক্ষুব্ধ হয়েছিল। বিভিন্ন স্তরে এইসব বিক্ষোভ ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহের কারণ হিসাবে দেখা দিয়েছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .