হুমায়ুন ও আফগান সংঘর্ষ
হুমায়ুন’ শব্দের অর্থ ‘সৌভাগ্যবান। কিন্তু বাস্তব জীবনে অধিকাংশ সময়ই হুমায়ুন দুর্ভাগ্যের শিকার হন। তাঁর রাজত্বের প্রথম পর্বে ১৫৩০ থেকে ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সমস্যা, আফগানদের আক্রমণ ও সিংহাসন রক্ষার জন্য তাবিরাম যুদ্ধ প্রভৃতি বিষয়গুলি তাকে অস্থির করে তুলেছিল।
সিংহাসনে বসার পর হুমায়ুনের সমস্যা
সিংহাসনে বসেই হুমায়ুন বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। এগুলি হল—
(১) বিহারের শের খাঁ ও গুজরাটের বাহাদুর শাহ। হুমায়ুনের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে আত্মপ্রকাশ করেন।
(২) উত্তর ভারতের হিন্দু শাসকগণ তখনও নবাগত মুসলিম শাসকদের মেনে নিতে পারেননি। তারা কেউ কেউ হুমায়ুনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।
(৩) সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে বাবর ভারতে যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার প্রতি জনগণের কোনাে সমর্থন ছিল না।
(৪) হুমায়ুনের ভাই কামরান, হিন্দাল ও আসকারী, হুমায়ুনের আত্মীয় মহম্মদ জাহান ও অন্যান্য নিকটজন দিল্লির সিংহাসনের প্রতি প্রলুব্ধ ছিলেন। তাঁরা হুমায়ুনের কর্তৃত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান।
হুমায়ুন-আফগান বিরােধ
হুমায়ুনের আমলে আফগান শক্তি আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ভারতের মােগল শক্তিকে ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু করে। উত্তর-পূর্ব ভারতে মামুদ লােদি, বাংলা ও বিহারের শের খাঁ এবং গুজরাটের বাহাদুর শাহ হুমায়ুনের সাম্রাজ্য রক্ষার সামনে বড়াে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা জৌনপুর, অযােধ্যা, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলগুলি দখল করে নেন। হুমায়ুন ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে দাদরার যুদ্ধে’ মামুদ লােদিকে পরাজিত করে উক্ত স্থানগুলি অধিকার করেন। কিন্তু ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন গুজরাটের বাহাদুর শাহকে পরাজিত ও বিতাড়িত করলেও বাহাদুর শাহ শীঘ্রই গুজরাট পুনর্দখল করেন। বাংলার শের খাঁ-ও তার অস্তিত্বে সংকট সৃষ্টি করেন।
শের খাঁ-র অগ্রগতি
বাংলা ও বিহারে আফগান নেতা শের খাঁ-র শক্তি বৃদ্ধি হুমায়ুনের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চুনার দুর্গকে কেন্দ্র করে শের খাঁ বিহারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। শের খাঁ ১৫৩৪ ও ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা আক্রমণ করেন। শের খাঁ-র অগ্রগতি রােধ করার জন্য হুমায়ুন তার চুনার দুর্গ অবরােধ (১৫৩৭ খ্রি.) এবং দখল করেন। কিন্তু তাতেও তিনি শের খাঁ-কে দমন করতে পারেননি। প্রথম পর্বে শের খাঁ-র মৌখিক আনুগত্য পেয়ে হুমায়ুন আগ্রায় ফিরে যান। ফলে শের খাঁ কিছু কালের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের সুযােগ পান।
চৌসার যুদ্ধ, ১৫৩৯ খ্রি.
হুমায়ুন গৌড় বা বাংলা আক্রমণ করেন। কিন্তু সুচতুর শের খাঁ মােগল বাহিনীর মুখােমুখি না হয়ে হুমায়নকে পাশ কাটিয়ে বারাণসী, কনৌজ ও জৌনপুর দখল করেন এবং দিল্লি ও আগ্রা আক্রমণ করে মােগল রাজধানীকে বিপন্ন করে তােলেন। শের খাঁ-র এরূপ অগ্রগতিতে হুমায়ুনের মােগল সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। অবশেষে ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের কাছে চৌসার যুদ্ধে শের খা ও হুমায়ুন মুখােমুখি হন। যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হয়ে কোনােক্রমে প্রাণ রক্ষা করে আগ্রায় পালিয়ে যান। শের খ বাংলা, বিহার, জৌনপুর ও কনৌজ দখল করেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .