Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

রাজপুত জাতির অভ্যুত্থান এবং ক্রমপর্যায়ের অগ্রগতির ইতিহাস আলোচনা কর।

বর্তমানে আমরা যে অঞ্চলকে রাজস্থান বলি পূর্বে তার নাম ছিল গুর্জর বা গুজরাত। যদিও পরবর্তীকালে গুজরাতের সীমানা আরো পশ্চিমদিকে সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানের রাজস্থান ভূ-খন্ডে চারটি ট্রাইব বসবাস করত। এরাই পরবর্তী সময় রাষ্ট্রের পত্তন করেছিল। এদের থেকেই কালক্রমে রাজপুত জাতির উদ্ভব হয়েছিল। এরা হল গুর্জর প্রতীহার, গুলিলোত, চাপোৎকট এবং চাহমান।

ক) গুর্জর প্রতীহার এই রাজপুত শক্তিটি খৃষ্টীয় অষ্টম শতকে আবির্ভূত হয়েছিল। এদের এলাকা ছিল যোধপুর, বিকাণীর ও জয়শলমীর অঞ্চলে। এই বংশের স্রষ্টা ছিলেন রাজা তাত ও তাঁর প্রপৌত্র শীলুক। এই রাজাদের রাজত্বের আনুমানিক সময়কাল ৬৪০ খ্রীঃ থেকে ৭২০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে। এছাড়াও আরো কয়েকটি গুর্জর রাজ্য ছিল যেমন “লাটরা”। এদের রাজধানী ছিল নান্দীপুরী। দ্বিতীয় রাজ্যটি ছিল অবন্তী, যার রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী। এর রাজা ছিলেন নাগভট্ট। নাগভট্ট অষ্টম শতকের গোড়ার দিকে রাজত্ব করতেন এবং কালক্রমে গুর্জর রাষ্ট্রগুলির নেতা হয়ে দাঁড়ান।

দ্বিতীয় ট্রাইবটি হল গুহিলোেত গণ। এরা মেবার অঞ্চলে রাজত্ব করত। ৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দের ‘আতপুর লিপি’ থেকে জানা যায় এই বংশের ২০ জন রাজা রাজত্ব করছেন এবং প্রথম রাজার নাম গুহদত্ত। এদের শাসনকেন্দ্র ছিল জয়পুর। তৃতীয় ট্রাইবটি হল চাপোৎকটগণ।

এরা গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। চতুর্থ ট্রাইবটি হল চাহমানগণ। এদের কে চৌহান বংশ বলে ইতিহাসে পরিচিত। আদি নিবাস ছিল শাকস্তুরী হ্রদ অঞ্চলে। ৭১৩ খ্রীঃ চিতোরগড় থেকে প্রাপ্ত লিপি থেকে জানা যায় মহেশ্বর, ভীম, ভোজ ও মান নামে চার জন রাজা পর্যায়ক্রমে রাজত্ব করেছিলেন।

এই ট্রাইবগুলি থেকে রাজপুত জাতির আদি বাসস্থান সম্বন্ধে জানা যায়। প্রসঙ্গত ভাবে স্মরণীয় যে হর্যোত্তর যুগে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল ‘রাজপুত জাতির অভ্যুস্থান’। ঐতিহাসিক স্মিথের মতে অষ্টম শতাব্দীর পর হতে রাজপুতরা উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

জনশ্রুতি অনুসারে রাজপুতানার কতক অঞ্চলে রাজপুত কথাটির অর্থে ‘ক্ষত্রিয় সামন্ত বা জাগগিরদারদের অবৈধ সন্তানদের বুঝায়’। প্রচলিত ‘রাজপুত’ কথাটি সংস্কৃত কথা ‘রাজপুত্র’ এর অপভ্রংশ। পুরাণ ও বাণভট্টের হর্ষচরিতে রাজপুত কথাটির উল্লেখ পাওয়া যায়। কিংবদন্তী কাহিনী অনুসারে রাজপুতরা সূর্য ও চন্দ্র বংশোদ্ভূত বলে চিহ্নিত করা হয়। ইতিহাস লেখক গৌরী শঙ্কর, হীরাচাঁদ ওঝা, সি. ভি বৈদ্য মতে রাজপুতরা আর্যগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে কিংবদন্তীকে সমর্থন করেছেন। অন্যদিকে আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই মতকে অগ্রাহ্য করেন এবং রাজপুতরা, হূণ, গুর্জর ও বহিরাগত জাতিগুলির সংমিশ্রণে উদ্ভূত বলে মনে করেন। টডের মতে রাজপুতদের বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটি শাখা হূণ নামে পরিচিত ছিল। অনেক বৃত্তির পরিবর্তনের সঙ্গে বর্ণেরও পরিবর্তন ঘটে। যেমন মেবারের গুহিলটরা মূলত ব্রাহ্মণ ছিলেন কিন্তু রাজ্যশাসন ক্ষমতা লাভ করলে তারা রাজপুত নামে পরিচিত হন। দ্বিতীয়ত বিভিন্ন অনুশাসনলিপির সাক্ষ্য প্রমাণ হতে ইহা প্রমাণিত হয়েছে যে রাজপুতরা বহিরাগত জাতি। তৃতীয়ত আকৃতিগত সাদৃশ্য হতেও ইহা প্রমাণিত হয়েছে জাঠ ও গুর্জরদের ন্যায় রাজপুত নামে পরিচিত জাতি বহিরাগত। পরিশেষে উল্লেখ করা যেতে পারে ভারতে রাজপুত বংশগুলির মধ্যে গুর্জর প্রতিহার, চন্দেল, চৌহান, পরমার ও কলচুরিরা বিশেষভাবে স্মরণীয়। এই রাজপুত জাতির শাসনের প্রকৃতি ছিল ‘সামন্ততান্ত্রিক ও দূর্গ কেন্দ্রিক’। রাজপুত রাজ্যগুলি প্রত্যেকটি কয়েকটি জায়গিরে বিভক্ত ছিল। জায়গিরদাররা ছিলেন জায়গিরের অধিপতি। রাজ্যের শক্তি ও নিরাপত্তা এদের উপরই নির্ভরশীল ছিল। আমলাতন্ত্র ছিল রাজপুত রাষ্ট্রের অপর বৈশিষ্ট্য। কর্মচারীরা ‘কায়স্থ’ নামে পরিচিত ছিলেন। রাজপুত রাষ্ট্রে প্রধান আয় ছিল ভূমি-রাজস্ব। এছাড়া রাজপুত রাষ্ট্রের গ্রাম্য স্বায়ত্ত শাসনব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল।

Leave a reply