প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চর ইতিহাস
কুষাণযুগে বিজ্ঞানচর্চা
কুষাণযুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছিল,
(১) কুষাণ সম্রাট প্রথম কণিষ্কের চিকিৎসক চরকের লেখা ‘চরক-সংহিতা” হল প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাশাস্ত্র সংক্রান্ত প্রথম প্রামাণ্য গ্রন্থ। চরক সংহিতার মূল গ্রন্থটি পাওয়া না গেলেও খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে ‘দৃঢ়বল’ নামে জনৈক লেখককের লেখা এই গ্রন্থের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ পাওয়া গিয়েছে;
(২) সুশ্ৰুত সংহিতা হল এযুগের অপর একটি উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ—এই গ্রন্থে ৮টি প্রধান ব্যধি ও তাদের প্রতিকারের কথা বলা হয়েছে। অনেকে সুশ্রুতাকে চরকের সামান্য পূর্ববর্তী সময়ের বলে মনে করেন;
(৩) কুষাণযুগের বিখ্যাত দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক নাগার্জুনকেও চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক অনেক গ্রন্থের রচয়িতা বলে মনে করা হয়।
গুপ্তযুগে বিজ্ঞানচর্চা:
জ্যোতির্বিদ্যা ও বিজ্ঞানচর্চার গুপ্তযুগে ভারতীয় মনীষার চরম বিকাশ ঘটে যেমন :
(১) আর্যভট্ট ও বরাহমিহির ছিলেন এ যুগের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক। আর্যভট্ট ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ্ ৷ ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ গ্রন্থে গ্রিক ও রোমান জ্যোতিষশাস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়।
(২) ভারতীয় গণিত শাস্ত্রবিদেরা এই যুগে দশমিকের ব্যবহার শুরু করে।
(৩) শল্যচিকিৎসাও এই যুগে অজানা ছিল না। অনেকের মতে, শল্যবিদ্যায় পারদর্শী সুশ্ৰুত সম্ভবত গুপ্তযুগেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে “ধন্বন্তরীর” অবদান অনস্বীকার্য।
(৪) চিকিৎসাশাস্ত্রে গুপ্তযুগের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিলেন বাণভট্ট। চিকিৎসাবিজ্ঞানে চরক ও সুশ্রুতের পরেই তাঁর স্থান ছিল। এযুগে পশু চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থাদিও ছিল। তাদের মধ্যে ‘হস্তীয়ুর্বেদ’ এবং ‘অশ্বশাস্ত্র’ নামে গ্রন্থ দুটি উল্লেখযোগ্য।
গুপ্তপরবর্তী যুগে বিজ্ঞানচর্চা:
গুপ্তযুগের অল্পকাল পরে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর বিখ্যাত গণিতবিদ ছিলেন ‘ব্রহ্মগুপ্ত’। ব্ৰহ্মসিদ্ধান্ত’ ও ‘খণ্ডপাদ্য’ নামে গ্রন্থ দুটিতে তিনি পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি শাস্ত্রের বিভিন্ন দিকে আলোকপাত করেছিলেন এদের জনপ্রিয়তা এত বছর পরেও অম্লান হয়ে রয়েছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .