গুপ্তযুগে নারীর স্থান
খৃষ্টীয় শতাব্দীর শুরু থেকে মেয়েদের অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল। স্মৃতিশাস্ত্রে বিশেষত মনুস্মৃতিতে তার নির্ভুল প্রমাণ পাওয়া যায়। সাধারণত গুপ্তযুগের সমাজ এই স্মৃতি শাস্ত্রগুলির উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছিল। মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে যে ভারতীয় নারী চিরকালই অন্যের অধীন। শৈশবে সে তার পিতামাতার অধীন যৌবনে স্বামীর অধীন ও বৈধব্যেপুত্রের অধীন।
গুপ্তযুগে মনুস্মৃতি কে ব্রাহ্মণ্য অভ্যুদয়ের “বেদ” বলা হত গুপ্তযুগে। সেখানে প্রাচীন ধারণার সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে মেয়েদের সম্পর্কে অনেক ভালো কথা বলা হয়েছে। সেখানে আরো বলা হয়েছে যে পিতা ভ্রাতা স্বামী যারা নিজেদের মঙ্গল চান, তারা সকলেই স্ত্রীজাতিকে সম্মান করতেন। এমনকি নারীকে পণ্য হিসাবে দেখার মনোভাবকেও নিন্দা করা হয়েছে। অন্যদিকে সমাজে নারীদের আচরণের অনেক বিধান ও প্রচলিত ছিল। স্বামী স্ত্রীকে শিশুর মত ভৎসনা করতে ও কঠোর শাস্তি দিতে পারত। সে যুগে ভারতীয় নারীরা প্রবৃত্তিতাড়িত পশুমাত্র বলে মনে করা হত। নারীদের বিড়ম্বনা কেবল বিবাহিত জীবনে সীমাবদ্ধ ছিল না, তাদের জন্মলগ্ন থেকে শুরু হত।
গুপ্তযুগে ভারতের কোন কোন অঞ্চলে মহিলারা শাসন করলেও তা মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কেন্দ্রিক গণরাজ্যগুলিতেই বলবত ছিল। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্য প্রভাবতী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করলেও তা ছিল রাজপরিবারগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ। উচ্চশ্রেণীর মেয়েদের জ্ঞানার্জনের কথা বাৎস্যায়ণ উল্লেখ করেছেন। গুপ্তযুগের রচিত “অমরকোষে বৈদিক মন্ত্রের শিক্ষিকা, আচার্যার উল্লেখ আছে। বাৎস্যায়ণ লিখেছেন যে আদর্শ পত্নীর মধ্যে সেবা, সংযম, সাংসারিক দক্ষতা ইত্যাদি গুণ সর্বদা থাকবে। কাত্যায়ণ স্মৃতিতে বলা হয়েছে যে স্ত্রী স্বামীর জীবদ্দশায় তার সেবা করবে এবং তার মৃত্যুর পরে পবিত্র জীবন যাপন করবে। স্বয়ম্বর প্রথার প্রচলন ছিল। কিন্তু মেয়েদের বিবাহিত জীবন সর্বদা সুখের ছিল না।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .