মগধের উত্থানে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের অবদান
বিভিন্ন তথ্য অনুসারে নন্দ বংশীয় রাজা ধননন্দকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হন। গ্রীক লেখক জাস্টিন বলেছেন চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন হীনবংশ জাত। জৈন গ্রন্থে উল্লেখ আছে তিনি ময়ূর পোষকদের মধ্যে মানুষ হয়েছিলেন। আবার বিষ্ণুপুরাণে উল্লেখ আছে চন্দ্রগুপ্তের মায়ের নাম “মুরা” যার থেকে তাঁর বংশ মৌর্য নামে খ্যাত হয়েছে।
পরবর্তীকালে রচিত বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস নাটকে চন্দ্রগুপ্তকে “বৃষল” এবং কুলহীন বলা হয়েছে। বৌদ্ধ গ্রন্থে তাকে পিপ্ফলিবনের মোরিয় উপজাতির লোক বলা হয়েছে। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলি অনুসারে চন্দ্রগুপ্তের পিতা মোরিয় কুলের প্রধান ছিলেন এবং হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী গর্ভবতী অবস্থায় পাটলিপুত্র আসেন এবং এখানে চন্দ্রগুপ্তের জন্ম হয়। বালক চন্দ্রগুপ্ত চাণক্য নাম এক জনৈক প্রতিভাশালী ব্রাহ্মণের নজরে পড়েন। এই চাণক্যই চন্দ্রগুপ্তকে তক্ষশিলা জনপদে নিয়ে যান এবং নানা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলেন তবে এই চাণক্যই অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা কৌটিল্য কিনা সে বিষয়ে ঐতিহাসিকদের কাছে সংশয় আছে।
বিভিন্ন তথ্য অনুসারে ৩২১ খ্রীঃ পূর্বাব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সিংহাসনে বসেন। ৩১২ খ্রীঃ পূঃ তাঁর সাম্রাজ্য নর্মদা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। গ্রীক লেখকদের মতে চন্দ্রগুপ্ত পাঞ্জাবে আলেকজান্ডারের সাথে দেখা করতে যান কিন্তু আলেকজান্ডার ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে হত্যা ও বন্দীর নির্দেশ দিলে কোন রকমে আত্মরক্ষা করেন। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে গ্রীক রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্যের ভাঙ্গনের সুযোগে গ্রীক সাম্রাজ্যকে আক্রমণ করেন। ৩০৫ খ্রীঃপূঃ গ্রীক সাম্রাজ্যের পূর্ব অঞ্চলের অধিপতি সেলুকাসের রাজ্য আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে সেলুকাস পরাজিত হন এবং হীরাট, কান্দাহার, কাবুলের এক অংশ চন্দ্রগুপ্তকে প্রদান করেন এবং বিনিময়ে চন্দ্রগুপ্ত তাকে ৫০০ হস্তী অর্পণ করেন। এছাড়াও চন্দ্রগুপ্তর সঙ্গে নিজ কন্যার বিবাহ দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং পাটলিপুত্র রাজসভায় মেগাস্থিনেস নামে একজন দূত প্রেরিত করেন। এই দ্রুত চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় ৫ বছর অতিবাহিত করেন এবং “ইন্ডিকা’ নামে একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেন।
যে সাম্রাজ্য পরবর্তী সময় অশোক শাসন করতেন তা মূলত চন্দ্র গুপ্তেরই সৃষ্টি, কেননা অশোক কলিঙ্গ জনপদ ভিন্ন আর কোন অঞ্চলই জয় করেন নাই। এছাড়াও চন্দ্রগুপ্তের পুত্র বিন্দুসারও বিজেতা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন না। সেই কারণেই অশোকের লেখমালা সমূহের ভৌগোলিক অবস্থানই প্রমাণ করে যে চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্য উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে পারস্যের সীমানা এবং দক্ষিণে মহীশূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কিছু তামিল গ্রন্থে “উন্নাসিক মৌর্য”দের কথা উল্লেখ আছে। যা সুদূর দক্ষিণে মৌর্য অধিকারের কথা স্মরণ করে দেয়। শক ক্ষত্রপ রাজা রুদ্রদামার জুনাগড় লিপি থেকে জানা যায় সৌরাষ্ট্র অঞ্চলেও তাঁর রাজত্ব ছিল।
আনুমানিক ৩২৪ থেকে ৩০০ খ্রীঃপূঃ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেছিলেন বিভিন্ন জৈন গ্রন্থ থেকে জানা যায় তিনি শেষ জীবনে ভদ্রবাহু নামক জৈন আচার্যের নিকট জৈনধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। চরম কষ্টসাধনের মধ্য দিয়ে তিনি মহীশূরের “শ্রবণবেলগোল” নামক স্থানে অনশনে দেহত্যাগ করেন। ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক বৃহৎ সাম্রাজের স্থাপয়িতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। তাকে গ্রীকরা বলত স্যান্ড্রাকোট্টাস বা মুক্তিদাতা। ২৭৩ খ্ৰীঃ পূঃ তাঁর রানী দুধরার পুত্র বিন্দুসার সিংহাসনে বসেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .