আর্যদের ধর্মজীবন
ঋগ্বেদেই আর্যদের ধর্মীয় সংস্কারের সূচনা দেখা যায় এবং ঋগ্বেদ হল প্রধানত একটি ধর্মীয় গ্রন্থ। তাতে রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতি অপেক্ষা ধর্ম সম্বন্ধেই অধিক তথ্য পাওয়া যায়। ঋক-বৈদিক আর্যদের ধর্ম বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরেই বিবর্তিত হয়।
প্রকৃতি পূজা
আর্যরা দেব-দেবী জ্ঞানে প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তির প্রকাশকে উপাসনা করত যে সকল প্রাকৃতিক দৃশ্য বা শক্তি মনে ভীতি, বিস্ময় ও শ্রদ্ধার উদ্রেক করত তাহা আর্যদের উপাসনার বস্তু ছিল, যেমন পৃথিবী, মরুৎ, রুদ্র, অগ্নি, ইন্দ্ৰ ইত্যাদি। ইহা ছাড় বিশ্বকর্মা, প্রজাপতি প্রভৃতি দেবতার পূজাও প্রচলিত ছিল। বৈদিক সাহিত্যে দেব-দেবী: সংখ্যা অগনিত।
আর্য ধর্মের বৈশিষ্ট্য
দেবতাদের বাসস্থান হিসাবে তাঁদেরকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন আকাশের দেবতা (মিত্র ও বরুন), বায়ুর দেবতা (ইন্দ্র ও মরুৎ) এবং পৃথিবীর দেবতা (অগ্নি ও সোম)। কালক্রমে ইন্দ্র আর্যদের প্রধান দেবতারূপে বরুনের স্থান অধিকার করেন। দেবতাদের মধ্যে ছোট বড় ভেদ করা হয় নাই। স্তুতির সময় প্রত্যেক দেবতাকেই প্রধানরূপে জ্ঞান করা হয়েছে ও তদানুসারে উপাসনা করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে আদি সর্বপ্রাণবাদ ছিল ঋক বৈদিক ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গ্রীকদের ন্যায় আর্যদের প্রাথমিক দেবতারা ছিলেন পুরুষ ও আকাশের সহিত সংশ্লিষ্ট। সেই সঙ্গে অবশ্য নারী দেবতারও উল্লেখ আছে।
যথা—পৃথিবী, অদিতি, ঊর্বা, অরণ্যানী, সরস্বতী ইত্যাদির। ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে ঋগ্বেদে একেশ্বরবাদের দিকে ঝোঁক দেখা যায়। তার মতে বহু নামে ঈশ্বর পরিচিত হলেও ঋক-বৈদিক আর্যরা একেশ্বরবাদেই মূলত বিশ্বাসী ছিলেন।
আর্যধর্মের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল বহু দেব দেবীর উপাসনা করলেও আর্যরা পৌত্তলিক ছিল না। ঋগ্বেদের কয়েকটি স্তোত্রে শিব লিঙ্গ, কৃষ্ণ, শিশুদেব প্রভৃতি দেবতার উল্লেখ দেখে অনেকে অনুমান করেন যে, সেই যুগে লিঙ্গ পুজার প্রচলন ছিল। আর্য্যধর্মের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হল এতে মন্দিরের কোন স্থান পাই।
যাগ-যজ্ঞানুষ্ঠান
ঋগ্বেদের যুগে যাগ-যজ্ঞানুজ্ঞান অতি সাধারণ ছিল দেবতাদের প্রীতার্থে যজ্ঞের আয়োজন করা হত এবং সাধারণত ঘৃত, যব ও মধু যজ্ঞাগ্নিতে আহুতি প্রদান করা হত। যজ্ঞের উদ্দেশ্য ছিল খুবই সাধারণ; যেমন সন্তান সন্ততি কামনা, কিংবা শত্রুর নিধন কামনা।
সমাজে পুরোহিত শ্রেণীর প্রাধান্য
ব্রাহ্মণ্যযুগে যজ্ঞানুষ্ঠান ক্রিয়া বহুল ও জটিল হয়ে উঠে এবং আহুতির ব্যবস্থাও ব্যয়সঙ্কুল হইয়া ওঠে। যাগ-যজ্ঞানুষ্ঠানে আধিক্যহেতু বহু পুরোহিতের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে সমাজে পুরোহিতশ্রেণীর প্রাধান্য বৃদ্ধি পায় এবং ক্রমে এরাই ধর্মের রক্ষক হয়ে ওঠেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .