খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতক থেকে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাদামির (বিজাপুর জেলার) চালুক্যগণ, যারা আদি পশ্চিমী চালুক্য নামেও পরিচিত, দক্ষিণ ভারতে রীতিমত প্রভাব বিস্তার করেছিল। বাদামির এই চালুক্যরা নিজেদের হারীতীপুত্র ও মানবাগোত্রীয় বলত। এই বংশের গোড়ার দিকে রাজারা ছিলেন জয়সিংহ ও তাঁর পুত্র রণরাগ, যাঁদের বিষয়ে খুব অল্পই জানা যায়। পরবর্তীকালের চালুক্যদের লেখমালায় এঁদের পূর্বপুরুষদের খুব জমকালো বংশতালিকা দেওয়া আছে, এঁদের বিষয়েও অনেক কাল্পনিক কথা বলা আছে।
রণরাগের পুত্র প্রথম পুলকেশী (৫৩৫-৬৬ খৃষ্টাব্দ) বৎপুর-বংশীয় দুর্লভদেবীকে বিবাহ করেন এবং ৫৪৩ খৃষ্টাব্দে রচিত তাঁর বাদামি-লিপি থেকে জানা যায় যে তিনি সেখানে একটি দুর্গের পত্তন করেছিলেন। অনুমান করা যায় যে বিজাপুর অঞ্চলেই তাঁর রাজত্ব সীমাবদ্ধ ছিল। বাদামির পূর্ব নাম ছিল বাতাপি।
প্রথম পুলকেশীর উত্তরাধিকারী ছিলেন তাঁর পুত্র কীর্তিবর্মা (৫৬৬-৫৯৮ খৃষ্টাব্দ)। তাঁর পুত্রের আইহোলি-লিপি থেকে জানা যায় যে তিনি নল, মৌর্য এবং কদম্বদের ধ্বংস করেছিলেন। এ থেকে অনুমান করা যায় যে কীর্তিবর্মার সময়ে চালুক্যদের রাজ্য মহারাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল, মহীশূর ও তামিলনাড়ুর কতকাংশে বিস্তৃত ছিল। কীতিবর্মা কোংকনের মৌর্যদেরও কিছু অঞ্চল জয় করেছিলেন।
কীর্তিবর্মার পর তাঁর ভাই মঙ্গলেশ (৫৯৮-৬১১ খৃষ্টাব্দ) রাজা হন। আইহোলি লিপিতে কলচুরিদের উপর তাঁর বিজয়লাভ ও তাঁর রেবতী দ্বীপ (রত্নাগিরি জেলার সমুদ্রোপকুলবর্তী রেদি নামক খাড়ি অঞ্চল) অধিকারের কথা উল্লিখিত হয়েছে। অপরাপর লেখমালাসমূহ থেকেও এই বক্তব্য সমর্থিত হয়। মনে করা যেতে পারে যে মঙ্গলেশের সময় মহারাষ্ট্রের অনেকখানি অংশই চালুক্যদের অধিকারে এসেছিল। মঙ্গলেশের রাজত্বের শেষ দিকে চালুক্যদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মঙ্গলেশের সিংহাসনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ান তাঁর বড় ভাই কীর্তিবর্মার পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী। দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোলি লিপির সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে মঙ্গলেশ নিজপুত্রকে চালুক্যদের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় পুলকেশীর সঙ্গে যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও নিহত হন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .