Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থায় চোলদের বিশেষ উল্লেখ সহ শাসন ব্যবস্থার বিবরণ দাও।

স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থায় চোল শাসন ব্যবস্থা

রাজ্য জয় ছাড়াও চোল রাজারা শাসনের বিষয়ে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিল। চোল রাজাদের অনুশাসনলিপি ও আরব গ্রন্থকারদের বর্ণনা থেকে চোল শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। চোল নৃপতিরাই সামন্তদের ক্ষমতা বিশেষভাবে খর্ব করে কেন্দ্রীয় শাসন শক্তিশালি করে তুলতে সামর্থ হয়। চোল শাসন ব্যবস্থায় কৃষককুলের সঙ্গে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। চোল নৃপতিরা ‘চক্রবর্তীগণ’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হতেন। চোল নৃপতিরাও রাজাদের দৈবস্ত্রত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ‘রাজগুরু’ ও অন্যান্য কর্মচারিদের কাছে পরামর্শ অনুসারে রাজা রাজ্য শাসন করতেন। কেন্দ্রীয় শাসনের সকল বৈশিষ্ট চোল শাসনব্যবস্থায় লক্ষ করা যায়।

রাষ্ট্রীয় বিভাগমন্ডল কোট্টম, নাড়ু ও কুরম : চোল সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল প্রদেশগুলি ‘মঙ্গল’ নামে পরিচিত ছিল। প্রদেশগুলির কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা ছিল না। রাজ্যবিস্তার সঙ্গে সঙ্গে প্রদেশ ও মঙ্গলগুলির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতো। প্রতিটি মঙ্গল কয়েকটি কোট্টম বা বলনাডুতে বিভক্ত ছিল। আবার প্রতিটি ‘কোট্রম’জেলা বা নাড়ুতে বিভক্ত ছিল। কতকগুলি গ্রাম্য সমবায় নিয়ে ‘নাড়ু’ তৈরী হত। এই গ্রাম্য সমবায় ‘কুরম’ নামে পরিচিত ছিল। প্রতিটি মঙ্গলের ভারপ্রাপ্ত রহিতেন একজন রাজ প্রতিনিধি, যিনি রাজার নিকট জবাবদিহি করতেন।

সাধারণ রাজপুত্ররাই এই পদে নিযুক্ত হত। মঙ্গলের অধিপতিকে মঙ্গলেশ্বর বল হত। রাজা ছিলেন সর্বোচ্চ শাসক চোল নৃপতিরা ছিলেন জাকজমকপ্রিয় এবং নানাবিধ উপাধি ধারণ করিয়া তাহারা নিজেদের কৃতিত্ব ঘোষণা করতেন। রাজপদ ছিল বংশানুক্রমিক। রাজা সকল ক্ষমতার অধিকারি হয়েও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। এক সুসংঘবদ্ধ কর্মচারী গোষ্ঠীর দ্বারা প্রশাসন চালিত হত। কর্মচারী নিয়োগের পদ্ধতি জানা যায় না। সম্ভবত উত্তর ভারতের রীতি নীতি এই ব্যাপারে অনুসরণ করা হত তবে যোগ্যতা, জন্মসূত্র ও সামাজিক মর্যাদা অনুসারে কর্মচারী নিয়োগ করা হত। চোল প্রশাসনের রাজাকে সাহায্য করার জন্য মন্ত্রি-পরিষদ ছিল কিনা তা জানা যায় না। তবে তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এক বিশেষ কর্মচারী পরিষদ ছিল। প্রতিটি শাসনবিভাগের অধিকর্তারাই সর্বদা রাজা সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতো এবং শাসন-সক্রান্ত নিয়ে পরামর্শ দান করতো। প্রদেশিক শাসনকর্তারা কেন্দ্রিয় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখিতেন এবং রাজার নিকট সকল বিষয়ে দায়ী থাকতো। প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অধীনে বহু কর্মচারী নিযুক্ত থাকতো।

রায়তী স্বত্ব ছিল দুই প্রকারের। ক) কোথাও গ্রামের গোষ্ঠীগত মালিকানা যেখানে গ্রামবাসী চুক্তিবদ্ধ রাজস্ব প্রদান করতো। আবার খ) কোথাও কৃষক মালিকানা স্বীকৃত ছিল এবং কৃষকরা সরাসরি রাজাকে রাজস্ব প্রদান করতো। সকল ক্ষেত্রেই রাজস্বেই পরিমাণ ছিল নির্দিষ্ট এবং রাজস্ব প্রদানের পর যাহা উদবৃত্ত থাকতো তাই রায়তের ভোগে আসতো।

অর্থ বা শস্য প্রদানের বিনিময় এবং শ্রমদান ও রাজস্ব বলে পরিগণিত হত, যদিও এই রীতি খুবই সীমিত ছিল। রাজাকে রাজস্ব দেওয়া ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ভূমিস্বত্ব নিয়োগী ও মন্দিরকেও রাজস্ব দেওয়া রীতি চোল সাম্রাজ্যের প্রচলিত ছিল। ‘ক্ষুদ্র কৃষক’ বা রায়ত মন্দিরে জল সরবরাহ করার বিনিময়ে খাজনা প্রদান হতে অব্যাহতি লাভ করতে। ব্রাহ্মণকে দান হিসাবে প্রদত্ত ভূমি ও দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসগীকৃত করমুক্ত ছিল। এই দুই প্রকারের দান ‘ব্রহ্মদেয়’ ও ‘দেবদেয়’ দান নামে পরিচিত ছিল। যারা রাজস্ব প্রদান করতে অর্থাৎ প্রজার এবং যারা তার করিতেন না অর্থাৎ কৃষি মজুর তারা ‘গ্রামিন সভাগুলির সদস্য’ হবার অধিকারী ছিলেন না এবং স্থানিয় স্বায়ত্ত শাসনেও কোন দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন কৃষকদের অবস্থা ছিল প্রায় ভূমিদাসদের ন্যায় এবং তাদের আর্থিক উন্নয়নের কোন আশা ছিল না। এরা অনেকে মন্দিরে জমিদারিতে অত্যন্ত নিম্নকাজে নিযুক্ত হত এবং নিম্নবর্ণভুক্ত হওয়ার অভিশাপের মন্দিরে প্রবেশ করা এদের পক্ষে নিষিদ্ধ ছিল। অনাবাদি জমির সংস্কার ও জঙ্গল পরিষ্কার করা কৃষক ও মজুরদের প্রধান কাজ ছিল এবং সরকার এই ব্যাপারে উৎসাহ যোগাতে। কারণ জমির সম্প্রসারণের সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনাও জরিত ছিল। জমির খাজনা এবং গ্রামের সভা ও মন্দিরগুলির দ্বারা আরোপিত আঞ্চলিক কর কৃষকদের উপর বোঝা স্বরূপ ছিল। এই করের ভার হতে মুক্তি পাওয়ার মাত্র দুইটি উপায় ছিল যথা – কর ছাড়ের জন্য রাজার নিকট আবেদন করা অথবা গ্রাম ছড়িয়া অন্যত্র চলে যাওয়া। সাধারণত অধিক ফসলের এক তৃতীয়াংশ রাজস্ব হিসাবে গৃহিত হত। রাজস্বের হার অত্যাধিক হলে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে তার আংশিক বা সামগ্রিক মুকুব করা হত। ভূমিরাজস্ব ছাড়াও বিভিন্ন শুল্ক, লবণ, বনসম্পদ, খনিও বৃত্তিকর থেকেও রাষ্ট্রের প্রচুর আয় হত। গ্রামসভাগুলি কর আদায় রত। জমির জরিপ করে ভূমি রাজস্ব নির্ধারণ করার রীতি চোল সাম্রাজ্যে প্রচলিত ছিল। আবাদী, জমি, মন্দির, পুষ্করিণী, সেচ-খাল ইত্যাদি কর মুক্ত ছিল। জলসেচের প্রতি দৃষ্টি রাখা হত।

চোল সাম্রাজ্যের শাসনপদ্ধতি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গ্রাম্য স্বায়ত্ত শাসন। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে স্বায়ত্ত শাসনমূলক প্রতিষ্ঠান গঠিত হত। চোল কর্মচারীরা গ্রামের সকল ব্যাপারে প্রতিনিয়ত অংশ গ্রহণ করত পরাদর্শক হিসাবে। এর ফলে উচ্চমহলে রাজনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও গ্রামীণ জীবনযাত্রা ছিল অক্ষুণ্ণ। গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনে আদর্শ ছিল গ্রামীণ প্রশাসনে গ্রামবাসীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ করা। এই উদ্দেশ্য প্রতিটি গ্রামে “গ্রামিণ সভা” বা পরিষদ ছিল এবং সভারই হস্তেই প্রশাসনের দায়িত্ব, ন্যাস্ত ছিল। আয়তনে বড় বড় গ্রামগুলিতে একাধিক গ্রামিণসভা ছিল এবং একজন গ্রামবাসী নিজের প্রয়োজনে অনুসারে এক বা ততোধিক গ্রামীণসভার সদস্য হতে পারতো। এক একটি গ্রাম কয়েকটি ওয়ার্ড বা পল্লিতে বিভক্ত ছিল। প্রতিটির পল্লির নিজস্ব সভা ছিল। সাধারণ সভার অন্তভুক্ত ছিল স্থানীয় অধিবাসীবৃন্দ। সাধারণ সভা ছিল তিনশ্রেণীতে বিভক্ত যথা ‘উর’, ‘সভা’ ও ‘নগরম’। গ্রামীণ শাসনকার্যে “গ্রামীণসভাগুলি” ছিল সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সরকারী খাজনা আদায় করবার কাজ গ্রামীনসভা পালন করতো। গ্রামের কৃষিজমির জরিপ, রাজস্ব আদায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও শিক্ষা বিস্তারের ভার গ্রামীণ সভার উপর ছিল। কৃষিছাড়াও কুটীর ছিন্ন ও গিল্ডগুলি গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। চোল শাসন প্রণালি সম্পর্কে স্মিথ বলেন যে, এই শাসন প্রণালি ছিল চিন্তা প্রসূত ও দক্ষ। তাহার ভাষায় ‘The administrative system was well thought and reasonably efficient.’

Leave a reply