বৈদিক সভ্যতা ও হরপ্পা সভ্যতার মধ্যে তুলনা
হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে নানা বিষয়েই পার্থক্য দেখা যায়।
(১) হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরভিত্তিক সভ্যতা কিন্তু বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামীণ সভ্যতা। প্রথমদিকে আর্যদের নগর সম্বন্ধে কোনও ধারণাই ছিল না। তাই অধ্যাপক কোশাম্বীব মতে বৈদিক সভ্যতার তুলনায় হরপ্পা সভ্যতা অনেক উন্নত ছিল।
(২) বৈদিক যুগের লোকেদের ঘরবাড়ি ছিল বাঁশ ও খড়ের তৈরি। অন্যদিকে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার ঘরবাড়ি ছিল ইটের তৈরি ও নগরগুলি জনবহুল।
(৩) হরপ্পা সভ্যতা ছিল তামা ও ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা অন্যদিকে বৈদিক সভ্যতা ছিল। লৌহ যুগের সভ্যতা।
(৪) হরপ্পা সভ্যতায় বৃষের সমাদর ছিল কিন্তু বৈদিক সভ্যতায় গাভীর সমাদর ছিল।
(৫) হরপ্পা সভ্যতায় অশ্বের ব্যবহার সম্পর্কে নিদর্শন অত্যন্ত বিরল। বৈদিক সভ্যতায় অশ্বের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
(৬) অনুমান করা যায় হরপ্পা লোকেরা যুদ্ধের ব্যাপারে পটু ছিল না। কারণ সে ধরনের অস্ত্রশস্ত্রের নিদর্শন পাওয়া যায়নি অন্যদিকে বৈদিক সভ্যতার লোকেরা যুদ্ধযাত্রায় পটু ছিল।
(৭) উভয় সভ্যতার মধ্যে পূজা পদ্ধতিরও পার্থক্য আছে। হরপ্পাতে মন্দিরের অস্তিত্ব নেই কিন্তু বৈদিক সভ্যতাতে মন্দির ছিল গুরুত্বপূর্ণ। হরপ্পা সভ্যতায় স্ত্রী দেবতার প্রাধান্য ছিল কিন্তু বৈদিক সভ্যতায় পুরুষ দেবতার। এছাড়াও হরপ্পা সভ্যতার ধর্মাচরণ ছিল সহজ সরল। অন্যদিকে বৈদিক যুগের ধর্মাচরণ ছিল জটিল ও ব্যয়বহুল যজ্ঞ কেন্দ্রিক।
(৮) হরপ্পাবাসীরা মৃতদেহ কবর দিত কিন্তু আর্যরা দাহ করত।
(৯) হরপ্পায় সম্ভবত অন্তঃ ক্রীড়ার প্রচলন ছিল। যেখানে বৈদিক সভ্যতায় দাবা, পাশা প্রভৃতি অন্তঃক্রীড়ায় পাশাপাশি বহিঃক্রীড়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
(১০) হরপ্পা সভ্যতার সমাজ শ্রেণী বিভক্ত ও গণতান্ত্রিক অথচ বৈদিক সভ্যতার সমাজ বর্ণবিভক্ত ছিল এবং শাসনতন্ত্রগুলি রাজতান্ত্রিক ছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .