Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বৈশিষ্ট্য

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার ক্ষেত্রে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলির মধ্যে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অন্যতম। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গ্রাহাম ওয়ালসের Human Nature in Politics এবং আর্থার বেন্টলির The Process of Government গ্রন্থ দুটির মাধ্যমে আচরণবাদী আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। বিশ শতকেরই দুই ও তিনের দশকে চালর্স মেরিয়াম,জর্জ ক্যাটালিন, স্টুয়ার্ট রাইস, হ্যারল্ড লাসওয়েল প্রমুখ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের হাত ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে এই মতবাদ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

আচরণবাদের সংজ্ঞা

আর্নল্ড ব্রেখটের মত অনুসারে, আচরণবাদ হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক প্রতিবাদী আন্দোলন। আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ঐতিহাসিক, দার্শনিক, বর্ণনাত্মক প্রভৃতি সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিরোধী। তাঁরা অভিজ্ঞতাবাদী ধ্যানধারণা এবং তত্ত্বের সাহায্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করতে চান। রবার্ট ডালের মতে, আচরণবাদ ব্যক্তির পর্যবেক্ষিত ও পর্যবেক্ষণশীল আচার-আচরণের মাধ্যমে রাজনীতির ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে। ডেভিড ট্রুমান আচরণবাদকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। রাজনৈতিক আচরণ বলতে তিনি শাসনব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত মানুষ ও গোষ্ঠীর কার্যকলাপ এবং পারস্পরিক প্রতিক্রিয়াকে বুঝিয়েছেন।

প্রধান বৈশিষ্ট্য

হিঞ্জ ইউলাউ আচরণবাদের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা—

১) ঘটনা, কাঠামো, প্রতিষ্ঠান এবং মতাদর্শের বদলে আচরণবাদে ব্যক্তির আচরণকে পর্যালোচনা করা হয়।

২) আচরণবাদ মনে করে সামাজিক জীব হিসাবে ব্যক্তির রাজনৈতিক আচরণ তার সমগ্র আচরণের একটি অংশমাত্র, তাই আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক আচরণকে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করা হয় না। আচরণবাদীরা রাজনৈতিক আচরণকে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, সামাজিক সংগঠন ও সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করেন।

৩) আচরণবাদী আলোচনায় নিছক ঘটনার আলোচনা স্থান পায় না। এই আলোচনা হল সচেতনভাবে তত্ত্বকেন্দ্রিক।

৪) আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় একটি কঠোর গবেষণা পদ্ধতি গড়ে তুলতে চায়। এজন্য পরীক্ষামূলক অনুসিদ্ধান্ত পরীক্ষামূলক নমুনা, নির্ভরযোগ্য কর্মপদ্ধতি ইত্যাদির ওপর নির্ভর করা হয়।

অন্যান্য বৈশিষ্ট্য

সামগ্রিক আলোচনার ভিত্তিতে আচরণবাদের আরও কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যায়—

১) আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত করতে চায়। এইজন্য আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ‘বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের’ দৃষ্টিকোণ প্রয়োগের পক্ষপাতী।

২) আচরণবাদে বর্ণনার পরিবর্তে সংখ্যায়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সংখ্যায়ন হল বৈজ্ঞানিক গবেষণা-পদ্ধতির একটি প্রধান উপাদান। আচরণবাদীরা বিজ্ঞানীদের মতো গবেষণালব্ধ ফলাফল পরিমাপ করার চেষ্টা করেন। এজন্য নমুনা সংগ্রহ, সমীক্ষা, সত্যতা নির্ধারণ, গণকযন্ত্রের ব্যবহার প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

৩) যথার্থ বিজ্ঞানে পরিণত করার জন্য আচরণবাদে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় মূল্যবোধকে বর্জন করা হয়। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতামত, ঔচিত্য-অনৌচিত্যের নৈতিক প্রশ্নকে এক্ষেত্রেও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মতো স্থান দেওয়া হয় না।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুশীলনে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বকে কোনো ভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। বিশেষত ব্যক্তি গোষ্ঠীর আচরণ, ভোটদাতার আচরণ, রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ প্রভৃতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য । সর্বোপরি নয়া-আচরণবাদ বা আচরণবাদোত্তর চিন্তাধারা মানবিক ও নৈতিক চেতনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের সঙ্গে যুক্ত করে রাষ্ট্রচিন্তার জগতে একটি নতুন মাত্রার সংযোজন ঘটিয়েছে বলা যায়।

Leave a reply