ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে লর্ড ডালহৌসির অবদান
১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ঘোর সাম্রাজ্যবাদী লর্ড ডালহৌসি ভারতের গভর্নর জেনারেল হয়ে এদেশে আসেন। এদেশে এসে তার একমাত্র উদ্দেশ্য যেনতেন প্রকারে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ। সেজন্য তিনি তিনটি নীতি গ্রহণ করেছিলেন। (ক) যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয় (খ) স্বত্ববিলোপ নীতি এবং (গ) কুশাসনের বা (অরাজকতার) অজুহাতে দেশীয় রাজ্যের ওপর ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তার।
(ক) যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয়
যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয় নীতি অনুসরণ করে প্রথমেই ডালহৌসি শিখদের পরাজিত করে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ সমগ্র পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এর ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আফগানিস্তানের সীমা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আফগানিস্তান ও বেলুচিস্তানের সঙ্গে মিত্রতাচুক্তি স্বাক্ষর করে ওই দুই দেশে ব্রিটিশ সরকার প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে।
অপরদিকে ব্রহ্মদেশে একমাত্র ইংরেজ বণিকরা ছাড়া অন্য ইউরোপীয় বণিকদের ব্যাবসা ও বসবাসের ওপরে বিধি নিষেধ আরোপ করলে ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৮৫২ সালে প্রথম ইঙ্গ-ব্রক্ম যুদ্ধে জয়লাভ করে ডালহৌসি ব্রহ্মদেশের শিল্পাঞ্চলের ওপর ইংরেজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
(খ) স্বত্ববিলোপ নীতি
স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে লর্ড ডালহৌসি ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এই নীতি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে তিনি দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন (গ) ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্য, (২) কোম্পানির অধীনস্থ দেশীয় করদ রাজ্য ও (৩) স্বাধীন দেশীয় রাজ্য।
স্বত্ব বিলোপ নীতির মূল কথা হল কোনো দেশীয় রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্য সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে যাবে। ওই রাজা যদি কোনো দত্তকপুত্র গ্রহণ করে তবে সেই দত্তকপুত্রের সেই রাজ্যের ওপর কোনো স্বত্ব বা অধিকার থাকবে না। দুর্ভাগ্য এই যে, সেই সময় বেশ কিছু দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা যান, যেমন—১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে সাতারা, ১৮৪৯ জৈতপুর, সম্বলপুর, ১৯৫০ এ বাঘাট, ১৮৫২ তে উদয়পুর, ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে নাগপুর এবং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসি স্বত্ববিলোপ নীতির ফলে সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে যায়।
(গ) কু-শাসনের অজুহাতে
অযোধ্যার নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যা রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। অযোধ্যা দখল করতে গিয়ে ব্রিটিশ শাসকের সাম্রাজ্যবাদী নীতির মুখোশ খুলে পড়ে।
১৮৫৬ সালে লর্ড ডালহৌসি ইস্তফা দিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
মূল্যায়ন
লর্ড ডালহৌসির আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী নীতি ভারতীয়দের মনে গভীর শঙ্কা ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে। দেশীয় রাজ্যগুলি অনুগত হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি জঘন্য আচরণের ফলে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তাদের বৈরী মনোভাব প্রকাশ পায়। দেশীয় রাজন্যবর্গের মনে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ঘৃণা, বিতৃষ্মাও সন্দেহ দানা বাঁধে, যা পরবর্তী বৎসরে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা করে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .