যেসব অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই জীবনধারণের উপযোগী পরিবেশ গড়ে ওঠে সেখানেই শহর গড়ে ওঠে। ভারতে শহর গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলো হল :
(১) বিস্তৃত সমভূমির অবস্থান
সমভূমি অঞ্চলে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, জীবিকার সমভূমিতেই গড়ে উঠেছে। সুযোগ প্রভৃতি জীবনযাপনের সমস্ত অনুকূল পরিবেশ বর্তমান থাকায় ভারতের বেশি ভাগ শহর
(২) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহনের সুবিধা
উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহনের সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক ভাবেই শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার হয় এবং শহর গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মুম্বই, কলকাতা ও চেন্নাই বহু দিন ধরেই মহানগর হিসেবে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে এবং বন্দর ছাড়াও রেল, সড়ক ও বিমান পথের জাল এইসব শহরকে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
(৩) প্রশাসনিক কেন্দ্র
বেশিরভাগ রাজধানী শহরগুলো প্রশাসন ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। চণ্ডীগড়, গান্ধিনগর, ভুবনেশ্বর প্রভৃতি শহরগুলো এভাবেই গড়ে উঠেছে।
(৪) শিল্পের সুবিধা
যেসব অঞ্চলে শিল্পের প্রসার ঘটে এবং জীবিকানির্বাহের পথ প্রশস্ত হয়, সেখানে কলকারখানাগুলোকে কেন্দ্র করে শহর গড়ে ওঠে, যেমন : বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত শিল্পকে কেন্দ্র করে ভারতের দুর্গাপুর, জামসেদপুর প্রভৃতি শিল্প- শহরগুলো গড়ে উঠেছে।
(৫) ব্যাবসাবাণিজ্য কেন্দ্র
যেসব অঞ্চলে ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটে, সেই সব অঞ্চলে বহু জনসমাগমের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শহর গড়ে ওঠে। ভারতে সুরাট, কটক প্রভৃতি শহরগুলো প্রধানত বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবেই গড়ে উঠেছে।
(৬) গুরুত্বপূর্ণ খনি অঞ্চল
গুরুত্বপূর্ণ খনিগুলোকে কেন্দ্র করে ভারতের অনেক শহর, যেমন : রানিগঞ্জ, ধানবাদ, ডিগবয়, কালোল প্রভৃতি শহরগুলো গড়ে উঠেছে।
(৭) বন্দরের সান্নিধ্য
গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের সমাগম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে শহর গড়ে ওঠে। ভারতের কান্ডালা, কোচিন, নিউ মামাগাঁও প্রভৃতি বন্দরগুলোকে কেন্দ্র করে এই কারণেই শহর গড়ে উঠেছে।
(৮) ঐতিহাসিক স্থান
ইতিহাস প্রসিদ্ধ অঞ্চলগুলোতে ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখার জন্য প্রচুর জনসমাগম হয় এবং সেখানে শহর গড়ে ওঠে। এই কারণেই আগ্রা, লক্ষ্ণৌ, গোয়ালিয়র, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি শহর গড়ে উঠেছে।
(৯) ধর্মীয় কারণ
ধর্মীয় স্থান ও তীর্থকেন্দ্রগুলোতে প্রচুর জনসমাগম হয় এবং স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে শহর গড়ে ওঠে। পুরী, বারাণসী, গয়া, তিরুপতি, আজমীর প্রভৃতি শহরগুলো এভাবেই গড়ে উঠেছে।
(১০) গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কেন্দ্র
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে প্রচুর শিক্ষার্থী সমাগম হয় বলে স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে শহর গড়ে ওঠে। আলিগড়, শান্তিনিকেতন, দেরাদুন প্রভৃতি শহরগুলো গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ হল সেখানে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি।
(১১) পর্যটন কেন্দ্র
পর্যটনশিল্প বিস্তারলাভ করায় দার্জিলিং, উদয়পুর, সিমলা, মুসৌরি প্রভৃতি শহরগুলো গড়ে উঠেছে। এইসব শহরে হোটেল, পর্যটন সংস্থা প্রভৃতিতে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হয়।
(১২) স্বাস্থ্য কেন্দ্র
স্বাস্থ্যকর স্থান হিসাবে খ্যাতিলাভ করায় প্রচুর জনসমাগমের জন্য মধুপুর, গিরিডি, শিমুলতলা, চুনার প্রভৃতি শহরগুলো গড়ে উঠেছে।
(১৩) সামরিক কেন্দ্র
গুরুত্বপূর্ণ সেনানিবাস হওয়ার জন্য মীরাট, আম্বালা প্রভৃতি স্থান শহরে পরিণত হয়েছে।
(১৪) বিবিধ কারণ
কতকগুলি অঞ্চল একাধিক কারণে শহর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে, যথা: দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই প্রভৃতি শহর।
(১৫) সীমান্ত অঞ্চল
অনেক সময় দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ব্যাবসাবাণিজ্যের সুযোগ থাকায় জনসমাগম হয় এবং তা শহর গড়ে উঠতে সাহায্য করে, যেমন : ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবিধার জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বনগাঁ এবং ভারত-নেপাল সীমান্তের বিরাটনগর শহরটির শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .