পৃথিবী অনবরত আপন মেরুরেখার চারদিকে আবর্তন করছে এবং চন্দ্রও নিজের কক্ষপথে একই দিকে (পশ্চিম থেকে পূর্বে) পৃথিবীর চারদিকে পাক খাচ্ছে। পৃথিবীর একবার আবর্তনে, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীর প্রত্যেক স্থান একবার করে চন্দ্রের সোজাসুজি সামনে আসে। এইভাবে যে স্থান চন্দ্রের সামনে আসে, সেই স্থানে মুখ্য জোয়ার, সেই স্থানের প্রতিপাদ বা বিপরীত স্থানে গৌণ জোয়ার এবং এদের সমকোণে অবস্থিত স্থানে ভাটা হয়, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় একই স্থানে দু’বার জোয়ার এবং দু বার ভাটা হয়। চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ২৭ দিনে একবার ৩৬০° কৌণিক পথ ঘুরে আসে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় চন্দ্র কমপক্ষে ৩৬০ + ২৭= প্রায় ১৩° কৌণিক পথ অতিক্রম করে। পৃথিবীর এই ১৩° পথ অগ্রসর হতে আরও (১৩×৪) ৫২ মিনিট সময় লাগে। এইজন্য পৃথিবীর কোনো অংশেই প্রতিদিন একই সময় মুখ্য জোয়ার হয় না।
পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট স্থানে প্রত্যেক মুখ্য বা গৌণ জোয়ারের পরবর্তী মুখ্য বা গৌণ জোয়ার আরও ৫২ মিনিট পরে (অর্থাৎ মোট ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পরে) অনুষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর একই নির্দিষ্ট স্থানে কোনো দিন যে সময় মুখ্য জোয়ার হয় তার (২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট + ২) ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পরে সেখানে গৌণ জোয়ার হয় এবং ঐ মুখ্য জোয়ারের ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পরে সেখানে পুনরায় মুখ্য জোয়ার হয়। এজন্য পৃথিবীর জলভাগের প্রত্যেক স্থানে জোয়ারের প্রায় ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পরে সেখানে ভাটা হয়।
আগের পৃষ্ঠার ছবিতে দেখানো হয়েছে কেন পৃথিবীতে মুখ্য জোয়ারের সময়ের পরিবর্তন ঘটে। কোনো দিনে চন্দ্রের ‘খ’-অবস্থানে পৃথিবীর ‘ক’-স্থানে মুখ্য জোয়ার হচ্ছে। এর ২৪ ঘণ্টা পরে চন্দ্র নিজের আবর্তনের জন্য প্রায় ১৩° সরে ‘খ’-অবস্থানে পৌঁছাচ্ছে। এই ১৩° পথ অতিক্রম করে পৃথিবীর কস্থানের ‘ক’ স্থানে গিয়ে পৌঁছাতে ৫২ মিনিট (প্রতি ৪ মিনিটে ১° হারে) সময় লাগে বলে পৃথিবীর ‘ক’-স্থানে মুখ্য জোয়ারের ( ২৪ ঘঃ +৫২ মিঃ = ) ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পরে আবার সেখানে মুখ্য জোয়ার হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .