আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান স্রোত
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের আকৃতি অনেকটা ইংরাজী ‘S’ অক্ষরের মত। আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ, পশ্চিমে উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, উত্তরে সুমেরু মহাসাগর এবং দক্ষিণে কুমেরু মহাসাগর অবস্থিত।
আটলান্টিক মহাসাগরে নিম্নলিখিত স্রোতগুলোর সৃষ্টি হয়েছে :
■ [১] উত্তর ও [২] দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ)
উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে আট্লান্টিক মহাসাগরে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে দুটি উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয়। এই স্রোত দুটি মোটামুটি পশ্চিমমুখী।
■ [৩] উপসাগরীয় স্রোত ও [৪] উত্তর-আটলান্টিক স্রোত
পশ্চিমমুখী উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতটি মেক্সিকো উপসাগরের মধ্যে দিয়ে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দিকে প্রবাহিত হয়। এই স্রোতের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশকে উপসাগরীয় স্রোত এবং উত্তর-পূর্ব অংশকে উত্তর আটলান্টিক স্রোত বলে। এই দুটি স্রোতই প্রকৃতিতে উষ্ণ।
■ [৫] ক্যানারি স্রোত
উত্তর আলান্টিক স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ ও আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম উপকূল ধরে প্রবাহিত হয়ে ক্যানারি স্রোত নামে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশেছে।
■ [৬] লাব্রাডার স্রোত এবং [৭] গ্রিনল্যাণ্ড স্রোত
মেরুবায়ুর প্রভাবে সুমেরু অঞ্চলের উত্তর মহাসাগর থেকে দুটি শীতল স্রোত গ্রিণল্যান্ডের পশ্চিম ও পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর আলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। গ্রিনল্যাণ্ডের পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত শাখাটিকে ল্যাব্রাডার স্রোত এবং পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত শাখাটিকে গ্রিনল্যাণ্ড স্রোত বলে।
বিপরীতমুখী উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল লাব্রাডার স্রোতের মিলনের ফলে নিউ
ফাউন্ডল্যাণ্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঘূর্ণী ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
■ [৮] ব্রাজিল স্রোত
বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত শাখা পশ্চিমমুখী হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার সেন্টরক অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে দক্ষিণ ও উত্তর এই দুই শাখায় ভাগ হয়ে যায়। দক্ষিণ শাখাটি ব্রাজিল স্রোত নামে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয় আর উত্তর শাখাটি উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়।
■ [৯] বেঙ্গুয়েলা স্রোত
পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে ব্রাজিল স্রোতটি আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল বরাবর আলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়।
■ [১০] নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত
উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ একটি স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়, একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বা বিপরীত স্রোত বলে। গিনি উপসাগরে এই স্রোত গিনি স্রোত নামে পরিচিত।
■ [১১] শীতল কুমেরু স্রোত
পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণাংশে অতিশীতল কুমেরু স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
■ [১২] শৈবাল সাগর
আলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, উপসাগরীয় স্রোত ও ক্যানারি স্রোত ডিম্বাকারে মিলিত হয়ে কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত একটি ঘূর্ণস্রোত বা জলাবর্তের সৃষ্টি করে। এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না এবং এই স্রোতবিহীন অঞ্চলে নানারকম শৈবাল, আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এই জন্য এই অঞ্চলকে শৈবাল সাগর বলা হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .