আকস্মিকবায়ু
ভূ-পৃষ্ঠের বেশিরভাগ অংশে বায়ুপ্রবাহ নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হলেও কখনও কখনও কোনো কোন স্থানে আকস্মিক ভাবে বায়ুপ্রবাহের গতিপথের পরিবর্তন ঘটে, এইসব বায়ুপ্রবাহকে আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বলা হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে যে সব আকস্মিক বায়ু প্রবাহিত হয় তাদের মোটামুটি ভাবে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : (ক) ঘূর্ণবাত এবং (খ) প্রতীপ ঘূর্ণবাত।
ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত
ঘূর্ণবাত
কোনো অল্প পরিসর স্থান যদি হঠাৎ বেশি মাত্রায় উত্তপ্ত হয় তবে সেই স্থানে তখন নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়; ফলে চারিদিকের অপেক্ষাকৃত শীতল ও উচ্চচাপের স্থানগুলো থেকে বায়ু প্রচণ্ড রেগে ঐ নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রে প্রবেশ করে। একেই ঘূর্ণবাত বলে।
ঘূর্ণবাত উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে অর্থাৎ বামাবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণাবর্তে ঘুরে ঘুরে কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়।
● ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলে এবং নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে হয়ে থাকে।
(১) গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণবাত
এই ঘূর্ণবাত সাধারণত গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে প্রধানত নিরক্ষরেখা থেকে ৬°-১৫° অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অর্থাৎ চিন সাগর, বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর এবং মেক্সিকো উপসাগেরর উপকূলবর্তী অঞ্চলে এবং কিছু দ্বীপে সীমাবদ্ধ থাকে।
চিন সাগরের ঘূর্ণবাত “টাইফুন”, পশ্চিম-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ঘূর্ণবাত “হ্যারিকেন”, বাংলাদেশের ঘূর্ণবাত “কালবৈশাখী” এবং “আশ্বিনের ঝড়” বলে পরিচিত।
টর্নেডো
অল্পস্থানব্যাপী ঘূর্ণবাতকে টর্নেডো বলে। অল্প পরিসরে সংঘটিত হলেও টর্নেডোর শক্তি ও ধ্বংসক্ষমতা অতি ভীষণ । এই ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের দিকে বায়ু এত প্রবল বেগে ছুটে যায় যে, তার টানে অনেক সময় বড়ো বড়ো গাছ উপড়ে বহুদূরে গিয়ে পড়ে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণবাতের ধ্বংস শক্তি অতি ভয়ংকর।
(২) নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণবাত
নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে দুই তিন-শ মাইল স্থান জুড়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়ে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তাকে নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণবাত বলে। নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের ঘূর্ণবাত গ্রীষ্মমণ্ডলের ঘূর্ণবাতের মতো প্রবল হয় না এবং ধনসম্পত্তির ক্ষতি করে না।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত
হিমমণ্ডল এবং নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের অন্তর্গত অল্প পরিসর স্থানের বায়ু শীতল হয়ে উচ্চচাপ কেন্দ্রে গঠিত হলে, সেখান থেকে বায়ু নিম্নগামী ও বহির্মুখী হয়ে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপের দিকে যায়, একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
অনেক সময় দুটো ঘূর্ণবাতের মধ্যবর্তী স্থানে প্রতীপ ঘূর্ণবাত দেখা যায়। প্রতীপ ঘূর্ণবাত, ঘূর্ণবাতের মতো ভীষণ নয় এবং দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে না। প্রতীপ ঘূর্ণবাত উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে ধাবিত হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .