নৌবিদ্রোহ
সূচনা
ভারতীয় সমাজ দীর্ঘদিন ব্রিটিশ শাসনে শৃঙ্খলিত, শোষণে জর্জরিত দেশবাসী চরম দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিল। এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ হিসেবে আন্দোলনকেই হাতিয়ার করে এগিয়ে এসেছিল অগণিত মানুষ। ভারতের আনাচে-কানাচে ক্ষোভের যে সুপ্ত আগুন জ্বলে উঠেছিল, নৌবিদ্রোহ তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
কারণ
ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের হাত থেকে ভারতীয় নাবিকরাও রেহাই পায়নি। ব্রিটিশ অফিসাররা জাতিগত কারণে ভারতীয় নাবিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করত। তাদের নিকৃষ্ট মানের খাবার দিত। সমযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় নাবিকদের পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি হত না। এমনকি তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেখানে সেখানে বদলি করা হত। এইসব কারণে ভারতীয় নাবিকদের ক্ষোভ শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভে পরিণত হয়।
আন্দোলনের প্রসার
১৯৪৬ সালের ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি মুম্বাই’-এর তলোয়ার জাহাজের নাবিকরা বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহী নাবিকেরা জাহাজের মাস্তুল থেকে ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে কংগ্রেসের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা, মুসলিম লিগ ও কমিউনিস্টদের পতাকা উত্তোলন করে। বিদ্রোহের আগুন তীব্রগতিতে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহ মাদ্রাজ, কলকাতা, কোচিন, করাচি প্রভৃতি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
সরকারের ভূমিকা
ব্রিটিশ সরকার সেনাবাহিনীর সাহায্যে নৌবিদ্রোহ অবদমিত করার চেষ্টা করে। অ্যাডমিরাল গডফ্রে বিদ্রোহীদের প্রতি কামান দাগার নির্দেশ দেন। দু-পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হয়। শেষ পর্যন্ত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মধ্যস্থতায় বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে।
উপসংহার
নৌবিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও ভারতের ইতিহাসে এই বিদ্রোহ বিশেষ তাৎপর্য মণ্ডিত। রজনীপাম দত্ত এই বিদ্রোহকে বলেছেন “Signal of the new era opening in India.” এই বিদ্রোহ অনেকের দ্বারা সমালোচিত হলেও বলা যায় যে, ভারতীয় সেনা ও সাধারণ মানুষের রক্তঝরা সংগ্রাম ভারতে ব্রিটিশ শাসনের পতনের সংকেত বয়ে নিয়ে এসেছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .