বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন ও তার গুরুত্ব
সূচনা
জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের ভূমিকা অভূতপূর্ব। ব্রিটিশ সরকারের শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচারের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি গড়ে ওঠে। এই গুপ্ত বিপ্লবী সমিতির মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম এক বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন
মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিপ্লবী সমগ্র দেশে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজনে অস্ত্র জোগাবার জন্য চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করেন। সেই জন্য ১৮ এপ্রিল বিপ্লবীরা চট্টগ্রামে পুলিশের অস্ত্রাগার লুঠ করেন এবং সেখানে একটি বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।
জালালাবাদের যুদ্ধ
এই ঘটনার পর সূর্য সেন ও তাঁর সহযোগী যোদ্ধারা নিকটবর্তী জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন। এই পাহাড় ব্রিটিশ সেনারা ঘিরে ফেলে। ব্রিটিশ বাহিনীর কয়েকশ সৈন্যদের সঙ্গে বিপ্লবীদের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ১২ জন বিপ্লবী মারা যান। ইতিহাসে এই যুদ্ধ জালালাবাদের মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত।
বিনয়-বাদল-দীনেশের ভূমিকা
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের তিনজন বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করেন। তাঁরা রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রবেশ করে কারা বিভাগের ইনসপেকটর সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। এর পর ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের গুলি বিনিময় হয়। শেষে পালানো অসম্ভব দেখে তাঁরা আত্ম-হত্যার চেষ্টা করেন। বিনয় ও বাদল আত্মহত্যা করেন। দীনেশ ধরা পড়েন এবং তার ফাঁসি হয়।
আন্দোলনের গুরুত্ব
বিপ্লবী আন্দোলন ব্যর্থ হলেও বিপ্লবীদের আত্মবলিদান বাংলার বিপ্লবীদের মনে প্রেরণা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করে। অহিংস আন্দোলনের অসারতা প্রমাণ করে ব্রিটিশ সরকারে এই বিপ্লবী তৎপরতা আতঙ্কিত করে তোলে। পরবর্তীকালে এই পথ ধরেই ভারতে বামপন্থী রাজনীতির উদ্ভব হয়।
উপসংহার
বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ ও নিঃশেষে প্রাণ বলিদান বাংলার ঘরে ঘরে আত্ম-ত্যাগের অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে। এই ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন যে ভারতে ব্রিটিশ সরকারের ভিত্তিমূলকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .