বায়ুমণ্ডলে তাপের তারতম্যের কারণ
ভূ-পৃষ্ঠের সব স্থানে এবং সব সময়ে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা একই রকম থাকে না। বছরের বিভিন্ন সময়ে ভূ-পৃষ্ঠের কোথাও বেশি, কোথাও কম অথবা কোথাও বা মাঝারি রকমের উষ্ণতা লক্ষ করা যায়। বায়ুমণ্ডলের তাপের তারতম্যের কারণগুলো হল :
■ [১] সূর্য রশ্মির তাপীয় ফল
সূর্যই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস। সৌরশক্তির প্রায় ২০০ কোটি ভাগের মাত্র এক ভাগ ক্ষুদ্র তরঙ্গ হিসেবে প্রতি সেকেণ্ডে ২,৯৭,০০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীতে আসে, একে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বলে। সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের ৩৪% তাপ শক্তি মেঘপুঞ্জ, ধুলোকণা প্রভৃতি দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায় এবং ৬৬% সৌরশক্তি সূর্যকিরণ হিসেবে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। এই ৬৬% সৌরশক্তির মধ্যে ১৯% বায়ুমণ্ডল সরাসরি শোষণ করে এবং বাকি ৪৭% ভূ-পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে।
■ [২] অক্ষাংশ
সৌরশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপের প্রধান উৎস হলেও, অক্ষাংশ অনুসারে সূর্যকিরণ ভূ-পৃষ্ঠের কোথাও লম্বভাবে এবং কোথাও তির্যকভাবে পড়ে। লম্বভাবে পতিত রশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত রশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয়। নিরক্ষরেখার ওপর সারা বছর ধরে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে। নিরক্ষরেখা থেকে যতই উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর দিকে যাওয়া যায়, তির্যকভাবে পতিত রশ্মি ততই সূর্যরশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে তির্যকভাবে পড়তে থাকে। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উভয় মেরুর দিকে উত্তাপ ক্রমশ কমতে থাকে।
■ [৩] উচ্চতা
বায়ুমণ্ডল সূর্যকিরণের দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয় না। সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আগত তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এলেও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে প্রথমে কঠিন ভূ-পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। পরে ঐ উত্তপ্ত ভূ-পৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয় এবং ঐ তাপ ধীরে ধীরে ওপরের বায়ুস্তরে সঞ্চারিত হয়। তাই নীচের বায়ুস্তরের উষ্ণতা বেশি হয় এবং যত ওপরে ওঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা ততই কমতে থাকে। সাধারণত প্রতি ১ কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ৬.৪° সেলসিয়াস হারে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কমতে থাকে, একে উষ্ণতা হ্রাসের গড়’ বলে।
■ [৪] ভূমির ঢাল
ভূমির ঢালের তারতম্যের জন্য কোনো স্থানের উত্তাপের পার্থক্য ঘটতে দেখা যায়, যেমন : উত্তর গোলার্ধে কোনো স্থানের ভূমির ঢাল দক্ষিণমুখী অর্থাৎ নিরক্ষরেখার দিকে হলে সেখানে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ে, কারণ উত্তর গোলার্ধে সূর্য দক্ষিণ- মুখী ঢালে প্রায় খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে সেখানকার বায়ুমণ্ডল বেশি উত্তপ্ত হয়। আবার উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানের ভূমির ঢাল (সাইবেরিয়া অঞ্চল) নিরক্ষরেখার বিপরীত দিকে হলে সেখানে সূর্যকিরণ তির্যকভাবে পড়ে এবং স্থানটি তুলনামূলকভাবে কম গরম হয়।
ওপরের চারটি প্রধান কারণ ছাড়াও কোনো স্থানের : (৫) ভূমিরূপ, (৬) সমুদ্র থেকে দূরত্ব, (৭) মেঘ ও বৃষ্টিপাত, (৮) বায়ুপ্রবাহ, (৯) সমুদ্রস্রোত, (১০) মৃত্তিকার প্রকৃতি, (১১) বনভূমির অবস্থান, (১২) মানুষের কার্যকলাপ প্রভৃতি কারণে বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্য হয়। বায়ুমণ্ডলে চাপের তারতম্যের কারণ : বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার মত বায়ু মণ্ডলের চাপও পৃথিবীর সব স্থানে এবং সব সময় একই রকম থাকে না।
বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্যের কারণ
বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্যের কারণগুলো হল :
(১) বায়ুর উষ্ণতা
বায়ুচাপের তারতম্যের ক্ষেত্রে উষ্ণতার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। উষ্ণ হলে বায়ু প্রসারিত হয় এবং ওজনে হাল্কা হয়ে যায়। ফলে উষ্ণ বায়ুর চাপ কমে যায়। আবার বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে বায়ু ঘন ও ভারী হয় এবং বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। অর্থাৎ বায়ুর উষ্ণতা বাড়লে বায়ুচাপ কমে এবং উষ্ণতা কমলে বায়ুচাপ বাড়ে।
(২) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের তারতম্য
জলীয় বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর চেয়ে হাল্কা হওয়ায় জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্রবায়ু শুকনো বায়ুর চেয়ে হাল্কা এবং এর চাপও অপেক্ষাকৃত কম। জলীয় বাষ্পহীন শুকনো বায়ু ভারী হওয়ায় বেশি চাপ দেয়।
(৩) বায়ুর উচ্চতা
বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার ধরা হলেও বায়ুমণ্ডলের ৯৯% ভর ভূ-পৃষ্ঠের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এবং এই অংশের চাপই আমরা অনুভব করি।
● বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্যের অন্য কারণগুলো হল: (8) পৃথিবীর আবর্তন, (৫) বায়ুমণ্ডলের গভীরতা, (৬) ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা, প্রভৃতি।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .