ভূমিকা
ভারতের মাটিতে ক্রমাগত আন্দোলন, ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের দাবি, ব্রিটিশ সরকারের সংস্কারনীতি যখন ভারতীয়দের আন্দোলন থেকে সরাতে অক্ষম হয়, তখন তৎকালীন ভারতসচিব বার্কেনহেড সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনে সাইমন কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করেন।
কমিশনের উদ্দেশ্য
ভারতীয়রা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষ কিনা এবং আগামী ভারতে সরকারের শাসনসংস্কারের রূপরেখা কেমন হবে তা দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে স্যার জন সাইমন এদেশে আসেন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কবল থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে সুরক্ষা দান করা।
ভারতীয়দের প্রতিবাদ
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারি সাইমন কমিশনের সদস্যবৃন্দ যখন বোম্বাই শহরে পা রাখেন তখন ভারতের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দল বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কারণ এই কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্যকে স্থান দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভকারীদের মুখে ধ্বনি ছিল—“সাইমন ফিরে যাও” (Go back Simon)। কমিশনের রিপোর্টকে একটি প্রতারণার দলিল ভেবে দেশ জুড়ে মিটিং-মিছিল শুরু হয়। জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
সাইমন কমিশন-বিরোধী আন্দোলনকে পিছু হটাতে সরকার কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করে। প্রবল বিক্ষোভকে উপেক্ষা করে কমিশন ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে তার প্রতিবেদন পেশ করে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন তারই ফলশ্রুতি।
সশস্ত্র বিপ্লবের জন্ম
সরকারের কঠোর দমননীতির ফলে ভারতে পালটা বিপ্লবী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। পাঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন, ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তের কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ, লাহোর ষড়যন্ত্র প্রভৃতি ঘটনা সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।
উপসংহার
ভারতে জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে সাইমন কমিশন-বিরোধী আন্দোলন একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সর্বস্তরের মানুষের এমন সম্মিলিত আন্দোলন আগে কখনও দেখা যায়নি। ভারতে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তখন থেকেই সোচ্চার হয়ে ওঠে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .