সূচনা
বঙ্গভঙ্গকে বাঙালিরা দেশ মাতৃকার অঙ্গচ্ছেদ হিসেবে কল্পনা করেছিল। এই সর্বনাশা কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বাংলার সর্বত্র বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় একে ‘এক গুরুতর বিপর্যয়’ বলে মন্তব্য করেন।
চরমপন্থীদের নেতৃত্ব
বঙ্গভঙ্গের নির্দেশ ঘোষিত হওয়ার দিন থেকে আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে নরমপন্থীরা প্রকাশ্য জনসভা ও পত্র পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার চালাতে থাকে। কিন্তু জনগণের ব্যাপক অংশ গ্রহণে এই আন্দোলন গণচরিত্র লাভ করে এবং চরমপন্থীদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপ নেয়।
আন্দোলনের কর্মসূচি
এই আন্দোলনের কর্মসূচি বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ‘বয়কট’-বলতে সমস্ত রকম বিলাতি দ্রব্য বর্জন বোঝায়। বিলাতি চিন্তাধারা, আদব কায়দা সবকিছু বর্জন করা বোঝায়। আর ‘স্বদেশি’-বলতে দেশীয় সব কিছুর ব্যবহারকে বোঝায়। এই দুই কর্মপদ্ধতিতে গড়ে ওঠে স্বদেশি আন্দোলন।
রাখিবন্ধন উৎসব
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ১৬ অক্টোবর সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুই বাংলার ঐক্যের জন্য ‘হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের হাতে রাখি বেঁধে ‘রাখিবন্ধন’ উৎসব পালন করেন।
আন্দোলনের ব্যাপকতা
এই আন্দোলন গ্রামেগঞ্জের সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশি দ্রব্য বর্জন, ইংরেজ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামাজিক বয়কট, বিদেশি দ্রব্যের দোকানে পিকেটিং প্রভৃতির মাধ্যমে স্বদেশিরা ব্রিটিশ সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। পরে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ আইন রদ হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি জাতি ইংরেজ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে নত শিরে মেনে নেয়নি। কার্জনের দুরভিসন্ধির ফলে বাঙালির হৃদয় বেদনায় মর্মাহত হয়। বেদনা থেকে জাগে ক্রোধ, ক্রোধ থেকে জাগে প্রতিরোধ ও প্রতিজ্ঞা। এই প্রতিজ্ঞাই দুই বাংলাকে আবার এক করে দেয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .