সুন্দরবন অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ও নদনদী
অবসথান ও বিস্তৃতি
দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, মথুরাপুর, পাথরপ্রতিমা, জয়নগর, কুলতলী, ক্যানিং, বাসন্তী, হাড়োয়া, মীনাখাঁ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জ—এই ১৫টি থানা নিয়ে বর্তমানে সুন্দরবন অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে। এখানকার মোট আয়তন ৯,৬০০ বর্গ কিলোমিটার। “সুন্দরী” গাছের বনভূমি থাকায় এই অঞ্চলটির নাম সুন্দরবন হয়েছে।
ভূমিরূপ
দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন অংশে গভীর অরণ্য ও দ্বীপময় সুন্দরবনের অবস্থান। এই অঞ্চলটি পুরোপুরিভাবে সক্রিয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। তাই এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ এখনও চলছে। সুন্দরবন অঞ্চলের উপর দিয়ে অসংখ্য নদ-নদী খাঁড়ি সৃষ্টি করে সমুদ্রে মিশেছে। সমুদ্রের অগভীর অংশে নদী বাহিত পলি জমে জমে চর বা ব-দ্বীপের আকারে নতুন ভূমিখণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীকালে চর বা দ্বীপগুলো পরস্পর যুক্ত হয়ে অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে পরিণত হয়। এইজন্য সুন্দরবন অঞ্চলটি ক্রমশ দক্ষিণে বিস্তৃত হয়ে আয়তনে বেড়ে যাচ্ছে। নদীগর্ভ ছাড়া সুন্দরবনের সমস্ত অংশই সমতল ও জলাভূমি। সমুদ্রতল থেকে এর গড় উচ্চতা মাত্র ৩-৪ মিটার।
সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চলটি অসংখ্য নদীনালা ও খাঁড়িদ্বারা বিছিন্ন। জোয়ারের সময় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের তলায় ডুবে যায় এবং কাদাময় ভূমির সৃষ্টি করে। সমুদ্র জলে ভেসে আসা কাদা ও বালুকণা জমে যাওয়ায় জায়গায় জায়গায় নদী-খাত মজে গেছে।
মৃত্তিকা
নদীতে বয়ে আসা পলি জমে এই অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সমুদ্র জলের প্রভাবে এখানকার মাটি নোনা। এখানে কাদামাটি, দো-আঁশ মাটি, বেলেমাটি প্রভৃতি দেখতে পাওয়া যায়। উর্বর দো-আঁশ মাটি চাষের পক্ষে খুব উপযুক্ত। নোনা জমিকে উদ্ধার করে চাষের কাজে লাগানো এই অঞ্চলের একটি সমস্যা। সুন্দরবন অঞ্চলের নদ-নদীগুলির জল লবণাক্ত হওয়ায় সেচের কাজে লাগে না। জমিতে ‘ঘের বাঁধ’ দিয়ে বৃষ্টির জল ধরে সাধারণত কৃষিকাজ করা হয়।
■ সুন্দরবনের জমিকে স্থানীয়ভাবে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন :
(১) বাদা এবং (২) আবাদ। সুন্দরবনের কর্দমাক্ত নিচু জলা জমি ও বনভূমি বাদা নামে পরিচিত। আর সুন্দরবনের যে অঞ্চলে চাষবাস করা হয় তাকে আবাদ বলে। বর্তমানে ক্যানিং, কাকদ্বীপ, সাগর এবং হাসনাবাদ অঞ্চলের বেশিরভাগ জমি আবাদে পরিণত হয়েছে।
নদ-নদী
বিদ্যাধরী, পিয়ালী, মাতলা, রায়মঙ্গল, কালিন্দী প্রভৃতি সুন্দরবন অঞ্চলের প্রধান নদী। এই নদীগুলোর সঙ্গে উত্তর থেকে বয়ে আসা নদীগুলোর কোন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। ফলে নদীগুলো জোয়ারের জল পেয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং ভাঁটার টানে শুকিয়ে যায়। সুন্দরবন অঞ্চলের নদীগুলো জোয়ারের জলে পুষ্ট বলে এদের জল লবণাক্ত।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .