ভূমিকা
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের (Educational Sociology) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি (Aims and objectives) সম্পর্কে আলোচনা করলে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি বোঝা যায়। এই ক্ষেত্রগুলো ধরে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধির ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরব। তুলে ধরব আরও দুটো ধারা, যার একটির জনক হলেন Burton R Clark (বি আর ক্লার্ক) এবং অপরটির MS Gore (এম এস গোরে)।
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যভিত্তিক পরিধি হল –
[1] বিভিন্ন জাতীয় সামাজিক দল বা গোষ্ঠী, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সেগুলির তাৎপর্য নির্ধারণ করা।
[2] সমাজের অন্তর্গত মৌলিক উপাদানগুলো, যেমন—মানবসমাজ ও তাদের নানা জাতীয় সমস্যা, জনসংখ্যা,যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সেগুলির তাৎপর্যগত দিক পর্যালোচনা করা।
[3] নানা জাতীয় সামাজিক পদ্ধতি, মিথস্ক্রিয়া এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাৎপর্যের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা। Ja] চিত্র পরিবর্তনশীল সমাজের পরিবর্তন, পরিবর্তনকেন্দ্রিক গতিশীলতা এবং সে ক্ষেত্রগুলির শিক্ষাগত তাৎপর্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা।
[5] শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান সামাজিক সম্পর্কগুলোর বিবিধ গঠন সম্পর্কে পর্যালোচনা করে।
[6] ইহা মানবিক সম্পর্কের নির্দিষ্ট গঠনে সম্পর্ক রাখে।
[7] সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ঘটনাবলির পর্যবেক্ষণ শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানে প্রয়োজন হয় না।Burton R Clark বর্ণিত শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি: BR Clark-এর মতে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান বহুক্ষেত্রে জ্ঞানের নতুন নতুন সম্পদ দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রকে সাজিয়ে তুলতে পারে। তিনি চারটি কেন্দ্রকে এ বিষয়ে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো হল-
- প্রথম ক্ষেত্রটি হল শিক্ষা ও সমাজতত্ত্ব (Education and Sociology)। সামাজিক ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব দেখা যায়। এক্ষেত্রে অর্থনীতি (Economy), সামাজিক স্তরবিন্যাস (Social stratification). কৃষ্টি (Culture). সামাজিক ঐক্য (Social integration) প্রভৃতি বিশেষভাবে যুক্ত।
- দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি হল ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ (Educational Institutions ) । এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্ম বিবিধ ধারায় বিস্তারিত। সেই ক্ষেত্রগুলো হল—প্রমশক্তি (Labour force), পেশা (Profession), পেশাগত অবস্থান (Job status), বৃত্তিমুখীনতা (Occupational integration), পরিচলন বা বিচলন (Mobility), কর্মে সাফল্য (Career success) প্রভৃতি।
- তৃতীয় ক্ষেত্রটি হল ‘শিক্ষামূলক সংগঠন’ (Educational organisation)। শিক্ষামূলক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলো সামাজিক পরিবর্তন আনে, সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায়। এর সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলো হল- (i) প্রথাগত সংগঠন (Formal organisation)। এটি সামগ্রিক পরিবেশকে চুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। ইহা জীবনাদর্শের মূর্ত সংগঠন হিসেবে জ্ঞানের বিবিধ থারাসিক্ত ব্যক্তিমানুষকে সম্পদে পরিণত করছে। (ii) শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত পারস্পরিক সম্পর্কের উপসংস্কৃতি (Set of interrelated subcultures of students and faculties) (iii) শ্রেণিকক্ষের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক (Teacher student relationship in classroom situation) ।
- শিক্ষার সমাজতত্ত্বের চতুর্থ ক্ষেত্রটি হল—অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে শিক্ষার উপ-একক (Educational subsystems of other institution) ওখানে শিক্ষাগত সমাজতাত্ত্বিক অনুসন্ধান শিক্ষা প্রক্রিয়াকে বাইরে থেকে বিশ্লেষণ করে। এখানে প্রধানত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রধামুক্ত বা অপ্রমাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি স্থান পেয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্রগুলো হল- (I) শিক্ষার বাইরে শিক্ষা (Education outside education), (ii) সৈন্যদল (Military), (iii) ব্যাবসা (Business), (iv) চার্চ ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (Church and other religious institutions) ।
উপসংহার
MS Gore বর্ণিত শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি: সমাজবিজ্ঞানী MS Gore-এর মতে শিক্ষা হল সমগ্র সমাজ ব্যবস্থায় এক উপরাবস্থা, যার যোগসূত্র হল সামাজিক স্তরবিন্যাস, জ্ঞান ও জ্ঞান সম্পর্কিত মনোভাব, রাজনৈতিক সংগঠন ইত্যাদি দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি হল, শিক্ষাব্যবস্থার পরিধিতে পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, শিক্ষক-শিক্ষক সম্পর্ক, শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী সম্পর্ক প্রভৃতি।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .